বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল খোলা রাখার দাবি নিয়ে মুঠোফোনে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেই ফোন কলকে কেন্দ্র করে এবার বহিষ্কার হয়েছে মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থী।
গেল গ্রীষ্মের ও ঈদ উল আয্হার ছুটিতে আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় হল প্রশাসনগুলো। এই সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনার জন্যে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারের কাছে আবেদন জানায় শিক্ষার্থীরা। হল খোলা রাখার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যেতে বলেন মাসুম হাওয়ালাদার।
তবে পরবর্তীতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসায় বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। হল বন্ধের ঘোষণা আসে হল প্রশাসন থেকে। ১৮ জুন শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করে প্রশাসন। সেসময় শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্ত মানতে না পেড়ে লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের মেহেদি হাসানের ফোন থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সঙ্গে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থীর কথোপকথন চলে। সেই কথোপকথনের বিভিন্ন অংশে শিক্ষার্থীদের হল খোলা রাখার দাবি জানাচ্ছিলেন। অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলছিলেন, “না সম্ভব নয়। নিয়মের বাইরে গিয়ে হল আমি খোলা রাখবো না।”
শিক্ষার্থীর এমন কোথা শুনে শ্লোগান দিতে থাকলে উপাচার্য একাডেমিকভাবে ফলাফল বিপর্যয়ের কথাও বলেন বলে সেই অডিওতে শোনা যায়।
উপাচার্যের এমন হুমকি প্রদানে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু করে সমালোচনা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শেষ হওয়ার পর সেই ১৮ জুনের অডিও কলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেহেদি হাসান নামের শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার সহ কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদাণ করে। যেখানে উপাচার্যের অনুমতি না নিয়ে ফোন কল রেকর্ড এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছে এই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রোপাগাণ্ডার তৈরী চেষ্টা সহ জাতীয় ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকেও উস্কানি দেয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে এই শিক্ষার্থীর বিষয়ে।
গত ৩০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মেহেদি হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার করা এবং কেনো স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি এই ঘটনায় আরো কারা যুক্ত রয়েছে সেটি উদঘাটনেও তদন্ত কমিটি করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থী বহিষ্কারের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে অনুযায়ী তারা কাজ করবে। শুধু ফোন কল করার জন্যে তাকে বহিষ্কার করা হয়নি তা রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যা আইনগত অপরাধ তার জন্যেও হয়েছে।”
প্রক্টর সঞ্জয় মুখার্জি বলেন,”এটা কমিটির সিদ্ধান্ত। কমিটি যা মনে করেছে সেটিই করেছে। এখানে আমার মন্তব্যের কিছু নেই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, “এভাবে কিছু হলেই বহিষ্কার করে দেয়া কখনোই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। আরো সুন্দর ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। শিক্ষার্থী ভুল করলে তাকে শাসন অবশ্যই করবো সে ছোট। আমরা বড় হয়ে বড় ভুল করলে আমাদের আমরা কিভাবে ক্ষমা করবো?”
অন্যদিকে এই নিয়ে ভয়ে কোন কথাই বলছে না বহিষ্কার হওয়া লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবী নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য কোন শিক্ষার্থীকে এভাবে প্রশাসন বহিষ্কার করার জন্য শোকজ দিতে পারে না। এটা তাহলে বলতেই হবে প্রশাসন এক তরফা মনগড়া ভাবে চলতে চাইতেছে। তাদেরকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে শিক্ষার্থীদের জন্যই তারা, তাদের জন্য শিক্ষার্থীরা না। আর তাছাড়া শিক্ষার্থীদের সরাসরি বলেই দেওয়া হয়েছে ভিসি স্যার চাইলে হল খোলা রাখা যাবে অন্যথায় হল কোন ভাবেই খোলা রাখা যাবে না, তাই শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ভিসি স্যারের সাথে যোগাযোগ করেছে।”