সাকিবুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি: পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত ধূপখোলা মাঠটি নতুন রূপে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দখল হয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত ধূপখোলা মাঠের নতুন সমন্বয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য জানিয়েছেন মাঠটি তাদের নয় তবে আগে যেভাবে তারা খেলেছে এখনো সেভাবেই খেলবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৫নং ওয়ার্ডের আওয়তাধীন মাঠটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মাঠের মালিকানা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কাগজ-পত্র না থাকলেও এটি ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মাঠের কিছু অংশ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলেন। তখন থেকে মাঠটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়টির।
২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানিয়েই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে রাতের আঁধারে বিভিন্ন জায়গায় খুড়া শুরু করে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের নামে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে এনিয়ে সিটি করপোরেশনের সাথে যোগাযোগ করে আলোচনার মাধ্যমে আশানুরূপ কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে মাঠে ফুটবল খেলার সব আয়োজনের পাশাপাশি বহুমুখী ভবন, বিনোদন কর্নার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট, নেট ক্রিকেট, ওয়াকওয়ে, কফি হাউস, ফুড কোর্ট, গ্রিন জোন, বাগান, ওয়াটার বডি, এলইডি লাইটিং, পার্কিং জোনসহ আরও কিছু আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প গুলোর মধ্যে শেষ হয়েছে মূল মাঠের কাজসহ ওয়াকওয়ে, বিনোদন কর্নার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট এবং নেট ক্রিকেটের কাজ। মূল মাঠটি খেলার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
মাঠ রক্ষণাবেক্ষণে এবং নিরাপত্তায় থাকবেন নিরাপত্তাকর্মী বা আনসাররা। এদের ব্যয় নির্বাহ করা হবে পাঁচতলা মার্কেট ভবনের আয় থেকে। এছাড়া মাঠ পরিচালনায় স্থানীয়দের সমন্বয়ে কমিটি থাকার কথাও রয়েছে।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়কারী হিসেবে কি ভূমিকা রাখবে তা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বাংলাদেশ মোমেন্টসকে জানান, মাঠটি আমাদের না, আমরা কেন বুঝে নিবো। তবে মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে আমরা আগের মতোই মাঠটি ব্যবহার করতে পারবো।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ ওহিদুজ্জামান বলেছেন, আমরা আগে যে সুযোগ সুবিধা গুলো নিয়ে ইউজড করেছি এখনো সেভাবেই করতে চাই।
এনিয়ে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জনাব গৌতম কুমার দাস জানান, কেরানীগঞ্জের মাঠটায় খেলা পরিচালনা করা খুবই অসুবিধাজনক। সেখানে খাবারে জন্য কোন ফুড এরিয়া নেই, কেউ ইনজুরি হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া কষ্ট, শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে ওখানে প্র্যাকটিসের জন্য যাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া পরিবহনের জন্য বাড়তি খরচ বহন করতে হয়।
তিনি আরো জানান, প্র্যাকটিসের জন্য মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গার মাঠ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ধূপখোলার মাঠটি হলে শিক্ষার্থীরা চাইলেই ক্লাস শেষে অল্প সময়ে এসে শুরু করতে পারবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে ধূপখোলা মাঠটি উপযুক্ত।
এছাড়া ধূপখোলা মাঠেই অবস্থিত ‘ইস্ট এন্ড ক্লাব’ এর জন্য আলাদা করে রুমের ব্যবস্থা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তেমন কিছু দেখা যায়নি। এ নিয়ে ইস্ট এন্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসান আসকারী বলেন, ক্লাবটি ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এখান থেকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলেই খেলেছে সাত জন। আমাদের জন্য এত সুন্দর ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মেয়র মহোদয়ের নিকট কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি।
তিনি আরো বলেন, জগন্নাথের ছেলেপেলেরা এখানে খেলেছে, আমাদেরো অনেক খেলা থাকে। আমি মনে করি মেয়র মহোদয়ের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে মাঠটি পরিচালিত হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট টিমে খেলার সুযোগ পান। তিনি এই ধূপখোলা মাঠেই প্র্যাকটিস করেছেন। এছাড়া জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা অর্জন। এজন্যই শিক্ষার্থীদের এসকল অর্জনের ধারাবাহিক ধরে রাখতে মাঠের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এখন দেখার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর তা কতটুকু পাচ্ছে।