বসে থাকা অবস্থায় নিতম্বের নিচ দিয়ে দড়ি ঘোরানোর কাজটি কঠিন বটে। সেই কঠিন কাজই ৩০ সেকেন্ডে ১১৭ বার করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল ইসলাম। গত মার্চে তিনি রেকর্ডটি গড়েন। ৩ অক্টোবর রাসেলের রেকর্ড গড়া ভিডিওটি গিনেস কর্তৃপক্ষ ফেসবুকেও শেয়ার করেছে। শুধু এই একটি রেকর্ডই নয়, রাসেলের দখলে এখন গিনেসের পাঁচটি বিশ্ব রেকর্ড। সব কটিই করেছেন দড়ির কারিকুরি দেখিয়ে।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল—নানা খেলায় অপার আগ্রহ রাসেল ইসলামের। একসময় দড়িলাফেও দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে দড়িলাফে দক্ষতা অর্জনের পেছনে শুধু ক্রীড়ামোদী মনই টানেনি, টেনেছিল রেকর্ড গড়ার ইচ্ছাও। ইচ্ছাপূরণের সেই পথে হাঁটতে রাসেলের অনুপ্রেরণা কনক কর্মকার। অনেকেরই হয়তো জানা, কুমিল্লার কনক কর্মকার বাস্কেটবল, ফুটবলসহ নানা বিষয়ে কসরত দেখিয়ে একাধিক গিনেস রেকর্ডের মালিক এখন। তাঁকে দেখে রাসেলও চাইলেন গিনেস রেকর্ড গড়তে, হাতে তুলে নিলেন দড়ি।
রাসেল ইসলাম শুরু করলেন এক পায়ে দড়িলাফের অনুশীলন। ছয় মাস ধরে চলল কঠোর অনুশীলন। ২০২০ সালের মাঝামাঝি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুটি রেকর্ড ভাঙার চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করলেন রাসেল। বিভাগ ছিল এক পায়ে দড়িলাফ, রেকর্ড ছিল দুটি। একটি ৩০ সেকেন্ডের, অন্যটি ১ মিনিটের। ৩০ সেকেন্ডে রেকর্ড তখন ১৪৪ বার দড়ি লাফানোর, আর ১ মিনিটে ছিল ২৫৬ বার।
আবেদনের তিন মাস পর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়। তারা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নির্দেশনা জানায় রাসেল ইসলামকে। সেই নির্দেশনা মেনে মাঠে নামেন রাসেল। প্রথমে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর এক পায়ে এক মিনিটে দড়ি লাফানোর চ্যালেঞ্জ নেন। এ দফায় তিনি ২৫৮ বার দড়ি লাফিয়ে আগের রেকর্ড ভাঙেন। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে এক পায়ে ৩০ সেকেন্ডের চ্যালেঞ্জে লড়েন। আগের রেকর্ড ভেঙে ১৪৫ বার দড়ি লাফান রাসেল। দুটি রেকর্ডের দাবিদার হিসেবে ভিডিওসহ আনুষঙ্গিক প্রমাণাদি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। এরপর যাচাই-বাছাই করে রাসেলকে স্বীকৃতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
ভাঙা, গড়া এই শব্দ দুটি যেন যেকোনো রেকর্ডের পাশাপাশি হাঁটে! রাসেল ইসলামের গিনেস রেকর্ডের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। একটা রেকর্ড গড়েছেন, দিন কয়েক পর আবার সেটা হাতছাড়া হয়েছেন। আবারও চেষ্টা করেছেন রেকর্ড গড়ার। এভাবে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইটে তাঁর রেকর্ডের সংখ্যা পাঁচটি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুরে রাসেল ইসলামদের বাড়ি। বাবা বজলুর রহমান কৃষিশ্রমিক। রাসেলের বাবা বলছিলেন, ছেলের এই খেলা তিনি কিছুই বোঝেন না। তবে ছেলের আগ্রহ দেখে কখনো বাধা দেননি। তাঁর ভাষায়, ‘কারণ, আমি এটুকু বুঝেছি যে ছেলে খারাপ কিছু করছে না।’
রাসেল বলেন, রোপ স্কিপিংয়ে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। তাই এসব খেলা বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে না। এটিকে জনপ্রিয় করতে যে ধরনের ব্যায়ামাগার, প্রশিক্ষক বা অন্যান্য সহযোগিতা দরকার, তা পাওয়া যায় না।