সাঈদ মঈন: দেশে ‘প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে সংসদের অধিবেশনে। বিদেশগামী মানুষের প্রবাস জীবনের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে জনমত যাচাইয়ের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি তুলে ধরেন তিনি। পরে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বছরে আমাদের ৮-১০ লাখ লোক বিদেশে যায়। তাদের জন্য আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুই করেনি বলে মতামত ব্যাক্ত করেন তিনি। তাদের ভাষাও শেখানো হতে শুরু করে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত জ্ঞানার্জনেও আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, “আমাদের ‘প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয়’ দরকার। যেখানে প্রবাসীদের ছেলে-মেয়েরা পড়বে এবং প্রবাসে গিয়ে কী করবে তার দীক্ষা লাভ করবে।”
সংসদ সদস্য আরো বলেন, “অল্পকিছু লোক দেশে চাকরি পায়। প্রবাস ছাড়া কোথাও আমাদের উল্লেখযোগ্য চাকরির বাজার নেই। এজন্য প্রবাসীদের দিকে আলাদা নজর দেওয়া উচিৎ। শিক্ষাব্যবস্থায় সেই দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ না করে গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয় করলে বেকার বাড়বে, দেশের খুব একটা লাভ হবে না রেমিট্যান্সও বাড়বে না। ”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে ট্যালেন্ট পাটনারশিপে আগ্রহী দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের উচিত ট্যালেন্ট পার্টনারশিপে যাওয়া। এটা না করে শুধু স্নাতক বানালে তারা সারা পৃথিবীতে বেকার হয়ে ঘুরবে।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ছিল, আছে, থাকবে। যে দেশে কোন সম্পদ, তেল, গ্যাস নেই সে দেশে জনগণই সম্পদ। তাদের শিক্ষিত ও দক্ষ করাই সম্পদ। সেখান থেকে আমরা ইট, পাথরকে বেশি ফোকাস দিচ্ছি। ব্রিজ, কালভার্টকে জাতির মেরুদণ্ড ভাবছি। শিক্ষা ও দক্ষতা জাতির মেরুদণ্ড হতে হবে।”
‘‘আমরা বানাচ্ছি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতির স্নাতক কিন্তু প্রয়োজন হলো নার্স, চালক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এই গবেষণা বাংলাদেশ কখনোই হয়নি। এটা না করার কারণে আমাদের স্নাতকরা বেকার হচ্ছে।’’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বক্তব্যে জবাবে জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশে বিদ্যমান ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করেন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সম্প্রতি স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো স্থান নেই। কাজই শুরু হয়নি। তার বাইরেও কিছু আছে একেবারে নতুন তৈরি হয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ছাড়া অধ্যাপক পদমর্যাদার কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা যত্রতত্র অনার্স খুলেছি। সেটি জনপ্রতিনিধিদের আগ্রহেই হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীও অনার্স মানের নয়। শিক্ষকও হয়তো অনার্স মানের নয়, কিন্তু আমরা খুলেছি।
মন্ত্রী উল্লেখ করেন, “ আমাদের উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে। সারাদেশে ২২৫৭টি কলেজে এসব শিক্ষার্থীরা পাঠদান নিচ্ছেন। আমরা এ মেয়াদে দায়িত্বগ্রহণের পরপরই এসব প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি।”
তিনি আরো বলেন, “এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন ১২টি পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সংযুক্তির কাজ আগামী মার্চ থেকে শুরু হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষার্থীরা যে ডিগ্রিই নিচ্ছেন না কেন, সেটি শেষ করার পর এ ১২টি বিষয়ে একবছর মেয়াদী পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিতে পারবেন। এছাড়াও এ বছর থেকে ১৯টি শর্ট কোর্সও যুক্ত করা হচ্ছে।”
‘‘এসব কোর্সগুলো বর্তমান সময়ে দেশে এবং বিদেশের চাকরির বাজারের যে চাহিদা সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে সাজানো হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এসব কোর্সগুলো খুব শিগগিরই শুরু হবে।’’
এ বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এসব কোর্সগুলোর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত থাকবে। যেমন কোনো একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন না কেন তার সঙ্গে ভাষা, আইসিটি, অন্ট্রাপ্রেনারশিপ এবং আরেকটি হচ্ছে সফট স্কিল। অন্যান্য দেশের তুলনায় চাকরির বাজারে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা যে বিষয়ে পিছিয়ে পড়েন সে বিষয়গুলো যুক্ত করা হচ্ছে।
জাতীয় সংসদে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর বিল-২০২৩ এর সংশোধনীর আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে।