The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪

দুর্নীতির অভিযোগে থমকে আছে ইবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খাদেমুল হারামাইন বাদশা ফাহদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ হয়নি প্রকল্প কার্যক্রম। জানা যায়, দূর্নীতির অভিযোগে শুরুর তিন বছর পরও থমকে আছে গ্রন্থাগারের ডিজিটালাইজেশন। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রবেশ মুখে বাঁ দিকে অবস্থিত ডিজিটাল অটোমেশন কক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রুমটি বন্ধ রয়েছে। ডিজিটাল সেবা পেতে অতিসত্বর কক্ষটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারীর উদ্যোগে আধুনিক লাইব্রেরি ও ডিজিটাল অটোমেশন সেবা প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এর অংশ হিসেবে কেনা হয় ৩৫টি কম্পিউটার, যার দাম আনুমানিক ২০ লাখ টাকা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনলাইনে যুক্ত করা হয় লাইব্রেরিতে থাকা প্রায় ৫০ হাজার বই। একইসাথে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রির কাজ ।

কিন্তু মহামারি করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয় ডিজিটাল অটোমেশনে প্রকল্পের কাজ। করোনার মধ্যেই তৎকালীন প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখানেই থমকে যায় ডিজিটাল অটোমেশন প্রকল্পের কাজ। করোনা পরবর্তীতে বর্তমান প্রশাসন দূর্নীতির অভিযোগ এনে বন্ধ রেখেছে এই ডিজিটালাইজেশন কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডিজিটাল অটোমেশন সেবার জন্য কেনা কম্পিউটারগুলো দীর্ঘদিন চালু না থাকায় কিছু কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯টি মেরামত করা হয়েছে। বাকি কম্পিউটারগুলো অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে লাইব্রেরি এক্সেস সেন্টারে। আইপিএসসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ২৬টি কম্পিউটারের।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম শাহরিয়ার বলেন, ‘আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলাতে লাইব্রেরিতে ডিজিটাল অটোমেশন দ্রুত চালু করা উচিত। এই সুবিধা চালু হলে নির্দিষ্ট একটি বার কোড সার্চের মাধ্যমে বিশ্ববিখ্যাত লেখকদের প্রায় সব বই আমরা লাইব্রেরিতে বসে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ফ্রিতে পড়তে পারবো। যেটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। তাই আমরা দ্রুত এ বিষয়টির দৃশ্যমান সমাধান চাই।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক এস এম আবদুল লতিফ বলেন, ‘ডিজিটাল অটোমেশনের প্রকল্পটি সাময়িক পরিক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছিল। অর্ধেকেরও বেশি কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিলো। করোনা পরবর্তী কাজটি পূর্ণাঙ্গ করতে বর্তমান প্রশাসনের কাছে তিনবার আবেদন করেছি। কিন্তু প্রশাসন আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। ব্যবহার না করায় ডিজিটাল সেন্টারের কম্পিউটারগুলো অচল অবস্থায় আছে এবং যন্ত্রাংশগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘বর্তমান প্রশাসন অভিযোগ তুলেছে যে, বিগত প্রশাসন এ প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে। যদি দুর্নীতি হয়েই থাকে তাহলে বর্তমান প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক। দুর্নীতি হলে দোষীদের বিচারের আওতায় আনুক। এই অস্পূর্ণ কাজটি আমরা সম্পূর্ণ করার জন্য বর্তমান প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও তারা সহযোগিতা করতে নারাজ’।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বিগত প্রশাসন হাতে নিয়েছিলো, কিন্তু করোকালীন কাজ বন্ধ থাকার দরুণ আমরা করোনা পরবর্তী প্রকল্পটি হাতে নিয়ে ব্যাপক দূর্নীতির সন্ধান পাই। কোথায় কত টাকা খরচ করেছে খোঁজ নিয়েও তার সুনির্দিষ্ট কোনো হদিশ পায়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির তদন্তের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. ক্যাম্পাস
  3. দুর্নীতির অভিযোগে থমকে আছে ইবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প

দুর্নীতির অভিযোগে থমকে আছে ইবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খাদেমুল হারামাইন বাদশা ফাহদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ হয়নি প্রকল্প কার্যক্রম। জানা যায়, দূর্নীতির অভিযোগে শুরুর তিন বছর পরও থমকে আছে গ্রন্থাগারের ডিজিটালাইজেশন। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রবেশ মুখে বাঁ দিকে অবস্থিত ডিজিটাল অটোমেশন কক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রুমটি বন্ধ রয়েছে। ডিজিটাল সেবা পেতে অতিসত্বর কক্ষটি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারীর উদ্যোগে আধুনিক লাইব্রেরি ও ডিজিটাল অটোমেশন সেবা প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এর অংশ হিসেবে কেনা হয় ৩৫টি কম্পিউটার, যার দাম আনুমানিক ২০ লাখ টাকা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনলাইনে যুক্ত করা হয় লাইব্রেরিতে থাকা প্রায় ৫০ হাজার বই। একইসাথে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রির কাজ ।

কিন্তু মহামারি করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয় ডিজিটাল অটোমেশনে প্রকল্পের কাজ। করোনার মধ্যেই তৎকালীন প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখানেই থমকে যায় ডিজিটাল অটোমেশন প্রকল্পের কাজ। করোনা পরবর্তীতে বর্তমান প্রশাসন দূর্নীতির অভিযোগ এনে বন্ধ রেখেছে এই ডিজিটালাইজেশন কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডিজিটাল অটোমেশন সেবার জন্য কেনা কম্পিউটারগুলো দীর্ঘদিন চালু না থাকায় কিছু কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯টি মেরামত করা হয়েছে। বাকি কম্পিউটারগুলো অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে লাইব্রেরি এক্সেস সেন্টারে। আইপিএসসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ২৬টি কম্পিউটারের।

এ বিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম শাহরিয়ার বলেন, ‘আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলাতে লাইব্রেরিতে ডিজিটাল অটোমেশন দ্রুত চালু করা উচিত। এই সুবিধা চালু হলে নির্দিষ্ট একটি বার কোড সার্চের মাধ্যমে বিশ্ববিখ্যাত লেখকদের প্রায় সব বই আমরা লাইব্রেরিতে বসে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ফ্রিতে পড়তে পারবো। যেটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। তাই আমরা দ্রুত এ বিষয়টির দৃশ্যমান সমাধান চাই।'

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক এস এম আবদুল লতিফ বলেন, 'ডিজিটাল অটোমেশনের প্রকল্পটি সাময়িক পরিক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছিল। অর্ধেকেরও বেশি কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিলো। করোনা পরবর্তী কাজটি পূর্ণাঙ্গ করতে বর্তমান প্রশাসনের কাছে তিনবার আবেদন করেছি। কিন্তু প্রশাসন আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। ব্যবহার না করায় ডিজিটাল সেন্টারের কম্পিউটারগুলো অচল অবস্থায় আছে এবং যন্ত্রাংশগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে'।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘বর্তমান প্রশাসন অভিযোগ তুলেছে যে, বিগত প্রশাসন এ প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে। যদি দুর্নীতি হয়েই থাকে তাহলে বর্তমান প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক। দুর্নীতি হলে দোষীদের বিচারের আওতায় আনুক। এই অস্পূর্ণ কাজটি আমরা সম্পূর্ণ করার জন্য বর্তমান প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও তারা সহযোগিতা করতে নারাজ'।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, 'এই প্রকল্পটি বিগত প্রশাসন হাতে নিয়েছিলো, কিন্তু করোকালীন কাজ বন্ধ থাকার দরুণ আমরা করোনা পরবর্তী প্রকল্পটি হাতে নিয়ে ব্যাপক দূর্নীতির সন্ধান পাই। কোথায় কত টাকা খরচ করেছে খোঁজ নিয়েও তার সুনির্দিষ্ট কোনো হদিশ পায়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির তদন্তের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে'।

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন