বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনেও উত্তাল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। বুধবার সকাল ৯টা থেকে তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
এদিকে, ঘাতক বাসটির চালক তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে নগরের কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কালো কাপড়ে ব্যানার করে প্রধান ফটক হতে শুরু করে চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বর হয়ে উপাচার্য ভবনের সামনে মিছিল সম্পন্ন করে। এ সময় উপাচার্য ভবনের সামনেও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলমান থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নিহত শান্ত সাহা ও তাওফিক হোসেনের উদ্দেশ্যে বুধবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শোকসভা আয়োজন করা হয়। এ সময় নীরবতা পালনসহ, নিহতদের সহপাঠীরা স্মৃতিচারণ কর্মসূচি পালন করে৷ দুপুর ১টায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আবারও সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন দফা দাবি তুলে ধরেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম এবং মাহবুব লায়লা প্রমা। দাবি না মানা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তৌফিক ও শান্ত ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। বাস মালিক সমিতি মাত্র দুই লাখ টাকা করে দিবে বলেছে যা লজ্জাজনক।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন শাহ আমানত ও এবি ট্রাভেলসের কাপ্তাই সড়কে রুট পারমিট বাতিল করতে হবে। এছাড়াও চুয়েটে অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিও মেনে নেয়া হয়নি। চারটি অ্যাম্বুলেন্স ও পাঁচটি বাসের বদলে একটি করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যা হতাশাজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা পুনরায় আলোচনা করব এবং ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে আসার ব্যবস্থা করব।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরের কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে ঘাতক বাসটির চালক তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি
দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পলাতক চালক ও তার সহযোগীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, নিহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সব খরচ শাহ আমানত পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করা, ক্যাম্পাসে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা বাড়ানো, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত ও এবি ট্রাভেলসসহ সব লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রাখা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ছয় লেন মহাসড়ক করা, প্রতিটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র এবং চালকদের লাইসেন্স নিয়মিত যাচাই, ছাত্রকল্যাণ পরিষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ছাত্র প্রতিনিধি দল গঠন করা।
বিরূপ মন্তব্য করায় শিক্ষককে শোকজ:
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (হিসাববিজ্ঞান) ড. সুমন দে’র বিরুদ্ধে।
এরই প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে চুয়েট প্রশাসন। চুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—দ্বিতীয় বর্ষের (২১ ব্যাচ) পানি কৌশল বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধি শিক্ষককে মোবাইল ফোনে ক্লাস বর্জনের বিষয়টি অবগত করলে ওই শিক্ষক বলেন, সিভিলের পোলা মরছে, তোমরা কেন ক্লাস করবা না? তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।