এখন বিসিএসে উত্তীর্ণরাই শুধু ক্যাডার বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। নন-ক্যাডারে এ সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নন-ক্যাডার পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়া হবে। বর্তমানে শুধু বিসিএস ক্যাডারদের ক্ষেত্রেই নিজের পছন্দ জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়।
পিএসসির সাধারণ সভায় ৯ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্ত হয়। কমিশন জানিয়েছে, শুরুতে সরকারি চাকরির বেতনকাঠামোর ১০ম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদ দিয়ে এ পদ্ধতির যাত্রা শুরু হবে। পরে অন্যান্য নন-ক্যাডার পদেও বিষয়টি চালু হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বর্তমান পদ্ধতিতে নন-ক্যাডার পদে চাকরিপ্রার্থীরা অপেক্ষমাণ থাকেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় অথবা দপ্তর বিভিন্ন সময় তাদের চাহিদাপত্র পাঠায়। দেখা যায়, শুরুতে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বা দপ্তর থেকে চাহিদা আসার পর মেধাতালিকার সামনের দিকে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গুরুত্বপূর্ণ ও চাকরিপ্রার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় দপ্তর থেকে নিয়োগের চাহিদা আসে। তখন সেখানে নিয়োগ পান মেধাতালিকায় পেছনের দিকে থাকা প্রার্থীরা।
সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে জানানোর পর পিএসসি বিষয়টিতে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন-ক্যাডার) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নন-ক্যাডারে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়টি পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি থেকেই কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে বৈষম্য, সময় ও অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ কমবে।
পিএসসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে নবম ও দশম গ্রেডে পিএসসির মাধ্যমে নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার জনকে। এ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যাঁরা বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ পান না, তাঁদের নন-ক্যাডারের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়। তবে তাঁদের কোন মন্ত্রণালয় বা দপ্তর পছন্দ, তা জানানোর সুযোগ ছিল না।
যেমন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি দপ্তরে উপসহকারী প্রকৌশলী পদটি রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। চাকরিপ্রার্থীরা এই ক্ষেত্রে কোন দপ্তরে চাকরি করতে চান, তা জানাতে পারবেন।
অবশ্য জটিলতাও আছে। সেটি হলো, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একেক সময় নন-ক্যাডারে নিয়োগের চাহিদা দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে যে মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকা প্রার্থীরা যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ পছন্দ করছেন, সেখানে নিয়োগের চাহিদাপত্রই আসছে না। এ বিষয়েও একটি সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। সেটি হলো, একই নিয়োগ যোগ্যতার পদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে বছরে একবার সমন্বিত চাহিদাপত্র চাওয়া হবে। সে অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
পিএসসির সাধারণ সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় যে একই পদের ক্ষেত্রে পুলভুক্ত চারটি দপ্তর, অর্থাৎ গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাইরে আরও মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। তাদেরও পুলভুক্ত করতে অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে পিএসসির কার্যালয়ের সামনে ২৫ জানুয়ারি গিয়ে কথা হয় কয়েকজন নন-ক্যাডার পদে অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। এতে মেধার মূল্যায়ন হবে।