ইবি প্রতিনিধি : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থীদের দুইপক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৮ জন। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকাল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন দুইটি পক্ষের মধ্যে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে দফায় দফায় সংঘর্ষটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, মার্কেটিং বিভাগের তূর্য ও আলী রিয়াজ, ফিন্যান্স বিভাগের জাকি ও সিয়াম, ল’ এবং ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিজন কৃষ্ণ রায়, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের কবিরুল, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাফি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ফুটবল মাঠের ভিন্ন দুইটি স্থানে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা চলাকালীন ক্রিকেট টিমের ফিল্ডার দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে মার্কেটিং বিভাগের হাফিজ স্টাম্প দ্বারা বিজন কৃষ্ণ রায়কে আঘাত করলে পরবর্তীতে কথা-কাটাকাটি রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এসময় ব্যাট স্ট্যাম্প এবং বাঁশ নিয়ে মারামারিতে জড়ান উভয়পক্ষের খেলোয়াড়েরা। অভিযোগ রয়েছে এসময় বহিরাগত নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি জিয়ন সরকার ও সম্পাদক কবিরুল ইসলাম বুট দিয়ে চোখে মুখে আঘাত করলে গুরুতর আহত হয় তূর্য, জাকিসহ মাফি, সিয়াম, আলী রিয়াজ। গুরুতর অবস্থায় তূর্য ও জাকিকে মেডিক্যাল সেন্টারে নেয়া হলে দুই পক্ষের মধ্যে আরেক দফায় মারিমারির ঘটনা ঘটে। এসময় বাংলা বিভাগের ধ্রুব, মার্কেটিং বিভাগের আলী রিয়াজ, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শাহিন পাশার অতর্কিত হামলায় আহত অবস্থায় জীবন বাঁচাতে দ্রুত মেডিক্যাল সেন্টার ত্যাগ করেন বিজন কৃষ্ণ রায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আহত শিক্ষার্থী ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের জাকি বলেন, আমাদের বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটি হলে আমরা মিউচুয়াল করতে এগিয়ে গেলে ফুটবল খেলতে থাকা কিছু শিক্ষার্থী বহিরাগত সহ আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হাতে বাঁশ ও লাঠি থাকলেও আমরা ছিলাম নিরস্ত্র।
ঘটনায় আহত ও ফুটবল এসোসিয়েশনের সম্পাদক কবিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতেছিলাম, মাঠের অন্য পাশে মার্কেটিং বিভাগের দুর্জয় হাফিজ, রিয়াজ, রিফাত সহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেট খেলতেছিলেন। একই মাঠে খেলার কারণে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তার একপর্যায়ে হাফিজ স্টাম্প নিয়ে আমাদের মারতে আসেন। তখন আমাদের দুপক্ষের মধ্যে বেশ ধাক্কাধাক্কি হয় এবং দুর্জয়ের নাকে আঘাত লাগে। আমার পায়েও অল্প ব্যাথা পাই। পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় এবং আমরা মাঠে খেলা চলমান রাখি। কিছুক্ষণ পর তারা আবারও মাঠে বেশ কিছু ছেলেপেলে, স্টাম্প ও লাঠি আমাদের টিমের গোলকিপার কে প্রচুর মারধর করে। তখন আমাদের মধ্যে আবারও মারামারি শুরু হয়ে যায়। এতে আমি, মেজবা,জিয়ন, বিজন সহ আমার সাথে থাকা বেশ কয়েকজন সহপাঠী আহত হই।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খুরশিদা জাহান বলেন, আহত কয়েকজনকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। এরমধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক, তাকে কুষ্টিয়া পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিরাজ করছে অস্বস্তিকর পরিবেশ। সরেজমিনে ফুটবলে মাঠের আশে পাশের এলাকায় আগামীকালের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের জন্য লাগানো পতাকা ও সাজ সজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ আজাদ বলেন, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করে মনে করছি নিতান্তই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক বা হলকেন্দ্রিক উসকানিমূলক ঘটনা নয়। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তরার স্বার্থে আমরা প্রস্তুত আছি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।