ফজলে রাব্বী পরশ: প্রথমবারের মতো একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ রাসেল মডেল স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে, নির্ধারিত ভর্তি ফি. ও বেতন দিয়ে ভর্তি হলেও তিন মাসে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ তারিখ হলেও রেজিষ্ট্রেশন হয়নি কোনো শিক্ষার্থীর। এক প্রকার অনিশ্চয়তায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ রাসেল মডেল স্কুলের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ‘একশ’ শিক্ষার্থীর ভাগ্য।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, কলেজ সেকশনে তাদের কোনো শিক্ষক নেই। তিনমাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ, সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ভর্তি হওয়ার পরও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন বাইরের কলেজে ট্রান্সপার করা হবে। ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে?
কেনো এই জটিলতা জানতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, এবারই প্রথম বোর্ডের প্রক্রিয়া মেনে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পায় একশ শিক্ষার্থী। রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা আছে, তবে সেটা নিরসনের জন্য আমরা সব রকমের চেষ্টা করছি৷
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শাখা খুলতে হলে প্রথমে ম্যানেজিং কমিটি এরপর শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, বোর্ড অব গভর্ণর এবং সবশেষে সিন্ডিকেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু শেখ রাসেল মডেল স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তা না মেনে শুধু বোর্ডের অনুমতি নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে একশ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করায়। ফলে একধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া, কলেজ সেকশনে তাদের কোনো শিক্ষকও নেই।
অন্যদিকে, ট্রান্সফার নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতে আপত্তি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তারা বলছেন, ট্রান্সফার যদি করিয়ে থাকে আগে থেকে কোনো নির্দেশনা বা সমস্যাগুলো বলা হয়নি কেনো। এছাড়া, এখন রাজশাহীতে কোনো কলেজেই সিট ফাঁকা নেই তাহলে আমাদেরকে কোথায় দিবে।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘তিন মাস ধরে অপেক্ষা করছি ক্লাস হয়না এখন তারা বলছে এখানে নাকি রেজিষ্ট্রেশন হবে না, তোমাদের কলেজটা থাকবে না। এখন আমাদের কী হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে একদম হতাশ আমরা। আমাদের তো যাওয়ার পথ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না যে অন্যান্য কলেজে দিবে।’
একজন অভিভাবক বলছেন, ‘এ অবস্থায় আমরা বাচ্চাদের দিকে আর তাকাতে পারছি না। এর জন্য তাদের একটা সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবস্থা চাই আমরা।’
সরেজমিনে দেখা যায়, শেখ রাসেল মডেল স্কুলের প্রধান ফটকে নামের শেখ রাসেল অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া শেখ রাসেলের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। সৃকুল উদ্ভোদনের স্মৃতিফলকও মুছে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সে রাতেই মূলত স্কুলের প্রধান ফটকে শেখ রাসেলের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্কুলের নামের ব্যানারে শেখ রাসেল নামের অংশকেও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া স্কুলের মধ্যে শেখ মুজিব কর্ণারেও হামলার চেষ্টা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, সদ্য পদত্যাগ করা অধ্যক্ষের কারণেই শিক্ষার্থীদের আজ বেহাল দশা। এছাড়া স্কুলের নামেই তো সমস্যা যেখানে শেখ রাসেল মডেল স্কুল নামের অংশে কলেজ সংযুক্ত করা হয়েছে কিন্তু অফিসিয়াল কাগজপত্রে এখনো স্কুল নামই বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে কলেজের রেজিষ্ট্রেশন থেকে শুরু করে কোনো কাজ করাও সম্ভব নয়।
তবে সবকিছুই ঠিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আকতার বানু। তিনি বলেন, ‘আমরা আজও উপাচার্য স্যারের সাথে বসেছিলাম সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে সংকট নিরসনের। স্কুলের নাম নিয়েও একটা সমস্যা রয়েছে আমরা বোর্ডে আবেদন করেছি অনুমোদনের জন্য। তবে উচ্চমাধ্যমিক শাখা খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রচলিত বিধিবিধান মানার কথা ছিল সেটি মানা হয়নি। সে কারণে এই মুহূর্তে শেখ রাসেল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইন্টারমেডিয়েট সেকশনের যে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করার কথা সেখানে জটিলতা তৈরী হচ্ছে। তবে, সেটা নিরসনের জন্য আমরা সব রকমের কাজ করছি৷’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, আমাদের কনসার্নে রয়েছে প্রশাসন এ বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তবে বারবার এ নিয়ে বসছি আলোচনা করছি, সমাধানেরও চেষ্টা করা হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আকতার বানু বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক শাখা খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রচলিত বিধিবিধান মানার কথা ছিল সেটি মানা হয়নি। সে কারণে এই মুহূর্তে শেখ রাসেল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইন্টারমেডিয়েট সেকশনের যে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করার কথা সেখানে জটিলতা তৈরী হচ্ছে। তবে, সেটা নিরসনের জন্য আমরা সব রকমের কাজ করছি৷’
এদিকে, এই ভর্তির সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের যে অনুমোদন নেই তা জানতো না রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছে বোর্ড।
এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, ‘এর জন্য শিক্ষা বোর্ড নয় বরং প্রতিষ্ঠানই দায়ী। ওরা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) ভর্তি করেছে কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন করবেনা কেনো। পার্টটাইম শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আপাতত রেজিষ্ট্রেশনের কাজটা চালিয়ে যেতে হবে নাহয় পরেরবার আমরা বন্ধ করে দিব। এখন এতগুলো শিক্ষার্থীকে আমরা শিফট করব কিভাবে।’