খুশির বার্তা নিয়ে আবারো সামনে কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাণপ্রিয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা। এটি কোরবানি ঈদ নামেও পরিচিত। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এই ঈদে মুসলমানদের আত্মত্যাগ, সেবা, দান ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। এবারের ঈদ-উল-আযহা উদযাপন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক রিপন আল মামুন।
লোক দেখানো নয়, কোরবানির হোক আল্লাহর প্রেমে
মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মৎসর্গ করায় কুরবানি। শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো এবাদত করাকে’ ইখলাস’ বলা হয়। আর লোক দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইবাদত করাকে রিয়া’ বলা হয়। সব ধরনের আমল কবুল হওয়ার শর্ত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিয়ত থাকা। তাই আমল করার আগে নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, নিশ্চয়ই সব আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (বুখারি, হাদিস :১)। তাই যার ইখলাস এর মান যত বেশি তার ইবাদতের সওয়াব তত বেশি। যে ইখলাসের সঙ্গে কোরবানি করবে সে তত বেশি সওয়াবের অধিকারী হবে। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে ভিন্নরূপ পরিলক্ষিত হয়। এটা মূলত মানুষকে দেখানো হয় আর মানুষকে দেখানো কোনো আমল আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাই পশু ক্রয় করার থেকে শুরু করে জবাইয়ের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও কিংবা সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
সাদিয়া জাহান সুরভি, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ।
ঈদ আসুক প্রতিটি ঘরে
দুই অক্ষরের একটি শব্দ ঈদ, কিন্তু এর পরিধি যে ব্যাপ্তি ঘটায় সেটা অনেক। ঈদ উৎসবের অন্যতম বিষয় হলো- সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য আর ঐক্যের মহামিলন। ঈদ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে মুসলমানের বাস অধিক হওয়ায় ঈদের আনন্দটাই জোয়ার তুলে প্রত্যেকের হৃদয়ে। বিভিন্ন কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো ক্ষুধার্ত পাখির মতো উড়ে যায় আপন মাতৃকোলে, কেবল সবাইকে নিয়ে একটি দিন কাটানোর আশায়। ঈদের দিন নিয়ে সকলেরই এক অন্য রকম আনন্দ কাজ করে যা লিখে বোঝানো অসম্ভব। এই ঈদ নিয়ে আসুক সকলের জীবনে সুখ,শান্তি, সম্প্রীতি। ধনী-গরিব প্রতিটি ঘরে বয়ে যাক ঈদ আনন্দ এই কামনাই করি।
লামিয়া আহমেদ, শিক্ষার্থী, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ।
কুরবানীর একমাত্র উদ্দেশ্য হোক আল্লাহর সন্তুষ্টি
ঈদ উল আযহাকে কোরবানি ঈদ ও বলা হয়। কোরবানি ঈদ বলতে বুঝায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য শরিয়ত নির্দেশিত উপায়ে কোনো প্রিয় বস্তু আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা। অর্থাৎ, কোরবানি ঈদের একমাত্র উদ্দেশ্য, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই ঈদ যথাযথ ভাবে পালন করতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যেই কোরবানি ঈদ পালন করতে হবে। আসলে কি আমরা আল্লাহকে খুশি করার জন্যই ঈদ পালন করছি? কিছু কিছু মানুষ রয়েছে, যারা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেন। আসলে, লোক দেখিয়ে কোরবানি করা আর যাই হোক,আল্লাহকে কখনই সন্তুষ্টির বার্তা পৌঁছাতে পারব না। আল্লাহকে খুশি করার জন্য অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেয়া, আল্লাহর নামে পশু জবাই করা এবং আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য কোরবানি দেয়া।
নাফিস সাকিব ইসলাম, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
কুরবানী ঈদ: সামাজিক ঐক্যের অনুপ্রেরণা
বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা একজন হিন্দু হিসেবে, আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। হিন্দুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, দীপাবলি ইত্যাদির পাশাপাশি মুসলিমদের কুরবানী ঈদও আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই মিলিত সমাজে বেড়ে ওঠার ফলে আমি কুরবানী ঈদকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি এবং একজন হিন্দু হিসেবে আমার নিজস্ব কিছু অনুভূতি ও ভাবনা তৈরি হয়েছে। কুরবানী ঈদ, যা ঈদুল আযহা নামেও পরিচিত, মুসলিমদের মধ্যে একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। কুরবানী ঈদ উপলক্ষে মুসলিম বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সাথে আমাদের আন্তরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। উৎসবের এই সময়ে আমরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করি, যা আমাদের সমাজের মজবুত বন্ধনের প্রতীক। কুরবানী ঈদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কুরবানী করা পশুর মাংস দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থদের মধ্যে বিতরণ করা। এই কাজটি সামাজিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। কুরবানী ঈদ আমাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, সকল ধর্মের মূল বার্তা হলো শান্তি, ভালোবাসা এবং মানবতা। ধর্মীয় ভিন্নতার পরেও আমরা সবাই একসাথে মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে পারি, যদি আমরা একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি এবং মানবতার সেবা করি। সর্বোপরি, কুরবানী ঈদ আমার কাছে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অংশ।
জয়া পালিত, শিক্ষার্থী, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ।
ঈদ হওয়ার কথা ছিলো সার্বজনীন, তবে আজ কেন আত্মকেন্দ্রিক?
ঈদ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে মুসলিম অধিক হওয়ায় ঈদের আনন্দটাই জোয়ার তুলে প্রত্যেকের হৃদয়ে। বিভিন্ন কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো ক্ষুধার্ত পাখির মতো উড়ে যায় আপন মাতৃকোলে।কেবল সবাইকে নিয়ে একটি দিন কাটানোর আশায়। কিন্তু তাও কি সবার ঘরে কিংবা হৃদয়ে ঈদ আসে? ঈদের দিনেও দেখা যায় রাস্তায় খালি গায়ে বসে থাকে অনেক অসহায় মানুষ। গরিব বাবা নিজে কয়েক বছরেও কিনতে পারে না একটি নতুন কাপড়। ঈদে পথশিশু এবং দরিদ্র মানুষদের জন্য খুব কষ্ট হয়। সারা বছরের কষ্টের মাঝে ঈদের দিনগুলোতে দরিদ্র মানুষ একটু সহানুভূতির আশায় থাকে। অথচ সম্ভ্রান্ত পরিবারের ব্যক্তিরা বিশাল আয়োজনে ঈদ পালন করে। কিন্তু অভাবী মানুষদের দিকে তাকানোর সময়ও হয় না তাদের। অথচ ঈদের দিনে গরিব-দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটানো বিত্তবানদের দায়িত্ব। ঈদ তখনই পুরোপুরি সুন্দর হবে যখন অসহায় পরিবারের প্রতিটি সন্তান নতুন পোশাক পরে ঈদের জামাতে অংশ নেবে।
জি.এম. ওসমান, শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ
ত্যাগের এক অপার সৌন্দর্য কুরবানির ঈদ
ঈদ উল ফিতর এর পর চলে আসলো ঈদ উল আযহা, এ দিবস শুধু একক কারণে মহিমান্বিত না , ইহার একাধিক কারণ আছে । এর মধ্যে গৃহপালিত পশু জবাহ করার নজির সবচেয়ে বেশি যার মাধ্যমে ত্যাগের এক অপার সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে। মুলত সৃষ্টিকর্তার কাছে এসব মাংস বা বস্তুসমূহ কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু বান্দার তাকওয়া। আমরা অনেকেই কোরবানির ক্ষেত্রে গরুর স্বাস্থ , কতটুকু মাংস হবে, আত্মীয়-স্বজন ও নিজ পরিবারের চাহিদা এসব ভেবে থাকি কিন্তু যার জন্য এত ত্যাগ তিতীক্ষা সেই সৃষ্টিকর্তা এসব কি চান ? আমাদের সবার আগে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য যা করা প্রয়োজন তা করা দরকার। বান্দার অবশ্যই তার সামর্থ অনুযায়ী কোরবানি দেওয়া উচিত। সমাজকে দেখানো বা সমাজের ভয়ে কুরবানী দেওয়ার চেয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য নিয়ত করে কুরবানী দেওয়া ঢের শ্রেয়।
মোঃ নিরব চৌধুরী, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ।
কুরবানী মানেই দূরত্বটাকে দূরত্বে রেখে ঐক্যটাকে পাথেয় করে বাঁচা
নিম্নবিত্ত পরিবারের বছর পাঁচেকের ছেলেটার কাছে প্রতিবেশীর কুরবানী দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটানোর অনুভূতি আর যে ছেলেটা সবে বুঝতে শিখেছে তার কুরবানী না দিতে পারার সংকোচের অনুভূতি এক নয়। ঠিক যেমন ভিন্ন হয় নিম্নবিত্ত পরিবারের যুবকটির অনুভূতি, যে হিসেবের খাতায় একটু গরমিলের কারনে এবছর কুরবানী দিতে পারছে না। তার কাছে থাকে আরও একটা বছরের অপেক্ষা আর পরেরবারের প্রতিজ্ঞার অনুভূতি। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছোট্ট ছেলেটির কাছে কুরবানী মানে, সবাই একসাথে মিলে ঘুরতে যাওয়া। যে ছেলেটা লেখাপড়ার জন্য পরিবার থেকে দূরে থাকে তার কাছে কুরবানী একটা অজুহাত, যার উপর ভর করে সে আরেকবার নিজের প্রিয়জনের কাছে যাবে। অপরদিকে, প্রবাসীর কাছে কুরবানী মানেই কিছুটা আনন্দের পাশাপাশি জমিয়ে রাখা কষ্টের ভার। আরেকটি ইদ পরিবার থেকে দূরে কাটানোর আফসোস। এতসব, সংকোচ, অপেক্ষা, অজুহাত আর আফসোসের ভিড়ে কুরবানী আসে সকল অভিন্নতাকে ভেঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সুর ছড়াতে। তাই, কুরবানী মানেই দূরত্বটাকে দূরত্বে রেখে ঐক্যটাকে পাথেয় করে বাঁচা।
আহমেদ নিহাল, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ
ঈদ উৎসব হোক আনন্দময়
মুসলিম জাতির আনন্দ এবং উৎসর্গর সংমিশ্রণের উৎসব হলো কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদের ছুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আলাদা একটা আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে । অনেক দিন পর বাড়িতে ফেরা হয় , শৈশবের বন্ধুদের সাথে দেখা হয় , প্রতিটা দিনই যেন ঈদের মতো করে কাটে । এইবার কোরবানির ঈদকে ঘিরে আমার পরিকল্পনার কোন শেষ নেই । আমার পরিকল্পনা চাঁদরাত থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে শুরু । ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করতে চাই। এরপর গোসল করে নতুন জামা-কাপড় পড়ে সেমাই খেয়ে বড় ভাইদের সাথে ঈদমাঠে যাবো । ঈদে নতুন জামা-কাপড় পড়ার সময় ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে যায় । ছোটবেলায় ঈদের আগে কাউকে নতুন পোশাক দেখাতাম না ভাবতাম নতুন পোশাক দেখালে পুরাতন হয়ে যাবে । ঈদের নামাজ শেষে বাড়িতে দ্রুত ফিরবো ।কুরবানীতে আমাদের এলাকায় সমাজব্যবস্থা চালু রয়েছে । কুরবানির গোশত কাটা , ভাগ করা , বন্টণ করা সমাজের সবাইকে করতে হয় । বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হবো।এভাবেই ঈদের দিন কাটানোর পরিকল্পনা আমার । কোরবানির ঈদে সকলের সকল সমস্যা দূর হয়ে যাক , সকলে মেতে উঠুক আনন্দে
মো:সোহেল রানা, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ