The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদ উৎসব

রমজানের একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর যে উৎসব তাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ বেশি। আর যেহেতু এই ঈদ-উল-ফিতর আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, তাই তারুণ্যের উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেশি। যার প্রভাব পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদ আনন্দেও। ঠিক তেমনি দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মনে জন্ম নিয়েছে ঈদ আনন্দের অনুভূতি। সেই আনন্দ, অনুভূতি, ভাবনা গুলোকে তুলে ধরেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মো কামরুজ্জামান পুলক।

ডিজিটালের ছোঁয়া আজ সব ইদের কোলাহল কেড়ে নিয়েছে

আমি কৈশোরের ঈদের কথা বলছি। টুকরো টুকরো খুশি গুলো জোড়া দিতাম ঈদের সময়। ঈদের আগের দিন সন্ধায় চাঁদ দেখার পর থেকে খুশিগুলো কাল- বৈশাখী বৈশাখি ঝড়ের মতো উপচে পড়ত। নতুন সকালে নতুন জামা পড়ার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে নদীতে গোসল করে নতুন জামা গায়ে দিয়ে সবার সাথে ঈদগাহে যেতাম।

ঝগড়া আর মনমালিন্য হওয়া বন্ধুটির সাথে ঈদ উপলক্ষে কোলাকুলি করে মিটমাট করতাম। আমাদের এ আনন্দের ছোঁয়া বড়দের মধ্যেও বিস্তার লাভ করতো।

এখনো ঈদ আসে তবে ইদের সে অনুভূতিগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ডিজিটালের ছোঁয়া আজ সব ইদের কোলাহল কেড়ে নিয়েছে।

ইচ্ছে করে আকাশের পানে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে। ‘হে সৃষ্টিকর্তা ইদের হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি আর খুশিগুলো আগের মতো ফিরিয়ে দাও।

মো মুন্না খান লিটন, শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর।

ঈদ হলো মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন

সমাজের সকল মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা একই সুরে মিলিত হয়।

ঈদ হলো মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।একমাস রোজা থাকার পর আসে আনন্দের এই দিনটি।এই দিনটি উপলক্ষে তাদের থাকে নানা আয়োজন।তারা নতুন পোশাক কেনে।সাধারনত এই দিনটায় তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে।সকালে নতুন পোশাক পড়ে নামাজে যাওয়া, কোলাকুলি করা এবং বিভিন্ন প্রকার খাওয়া দাওয়া,ভ্রমণসহ আরো নানা রকম পরিকল্পনা থাকে এই দিনটিকে ঘিরে।শুধু তাই নয় এই দিনটিতে সমাজের সকল মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা একই সুরে মিলিত হয়।তাদের মধ্যে থাকেনা কোন বৈষম্য, কোন ভেদাভেদ। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আন্তরিকতার মধ্য দিয়েই তারা দিনটিকে উদযাপন করে।

এককথায় এই উৎসবের মধ্য নিয়ে যেমন সকলের মধ্যে এক আন্তরিক মেলবন্ধন তৈরি হয় তেমনি পরিবারের মধ্যে গঠিত হয় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক।তাই এই দিনটি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে খুব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়।

লাবণ্য রায় লিসা, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ঈদ সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত

ঈদ মানে খুশি। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স:) এর হাদিস অনুযায়ী, পৃথিবীর সকল মুসলমান ভাই ভাই। আর ঈদ এই ভ্রাতিত্বকে আরো মজবুত করে। পবিত্র ঈদকে শুধু আনন্দ শব্দটির মাধ্যমেই সংজ্ঞায়িত করা যায় না। কারণ, এটি একই সাথে ভ্রাতৃত্বের দিন, সামাজিক সম্প্রীতির দিন। এই দিন সকল ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়, শত্রু, মিত্র সবাই কুশল বিনিময় করে। এটি সামাজিক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। পবিত্র রামাদানের ৩০ টি রোজা পালনের পর পবিত্র ঈদ–উল ফিতরের যে আনন্দ মুসলমানদের হৃদয়ে অনুভূত হয়, সেটা মুসলমানদের কাছে সবচাইতে বড় অনুভূতি। ঈদ আমাদেরকে সাম্যবাদ শেখায়, ঈদ সামাজিকতা শেখায়, ঈদ সৌহার্দ্য শেখায়, ঈদ বৈষম্য বিমোচন শেখায়। তাই আসুন, আমরা সকলের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়– স্বজন সবাইকে নিয়ে ঈদের সৌন্দর্য উপভোগ করি।।

ঈদের এই অপার সৌন্দর্যকে সামনে রেখেই হয়তো নজরুল লিখেছিলেন–

” আজ ভুলে যা তোর দোস্ত –দুশমন, হাত মিলাও হাতে;

তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল, ইসলামে মুরীদ”। ঈদ মুবারাক।

মুজাহিদুল ইসলাম জিলান, শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর।

বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ বিলীন হয়ে যাচ্ছে সময়ের গহ্বরে নিরবে নিভৃতে

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরে সেই কাঙ্খিত ঈদ।এই ঈদের দিনকে ঘিরে আমাদের সকলের কত স্বপ্ন, কত আলোচনা, কত কল্পনা,কত আনন্দ বিলানোর স্মৃতি থাকে।রমজানের কঠোর সিয়াম সাধনা শেষে আসে ঈদুল ফিতরের আনন্দ বার্তা।

ঈদের আনন্দ ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এটি সামাজিক উৎসব। সবার মাঝে আনন্দ ভাগ করে দয়া; সবার সাথে শেয়ার করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ঈদ-উৎসবের বৈশিষ্ট্য।

রোজা পালনের মাধ্যমে আর্ত-পীড়িত-বুভুক্ষু মানুষের কষ্ট যেমন উপলব্ধি করা যায়, ঈদ-উৎসবে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়াকে ঈদের শিক্ষা বলা যায়। ফেৎরা-জাকাত ধনীদের অবশ্যই প্রদেয়। তবে জাকাত দিতে হবে নিরবে-নিভৃতে; ঢাকঢোল পিটিয়ে লোক জড়ো করে নয়।

ঈদ অনাবিল আনন্দ আর সুখ নিয়ে আসে। কিন্তু এই ঈদ আনন্দ এখন আর ঠিক আগের মতো সবার কাছে উপভোগ্য হয় না, বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ বিলীন হয়ে যাচ্ছে সময়ের গহ্বরে নিরবে নিভৃতে। আনন্দ গুলো শুধু ছোটদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ছোটবেলায় ঈদ আসার এক সপ্তাহ থেকে মনের মধ্যে নতুন জামা কাপড় আর কত সব রঙিন স্বপ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতো।ঈদের দিন কি করবো কি করবো না, কোথায় ঘুরতে যাবো, কত পরিকল্পনা। এখন এসব শুধু কল্পনায় আসে বাস্তবে আর হয় না।

মো কামরুজ্জামান পুলক, শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

বড় হয়ে এখন শুধু সেলামি দিয়ে আনন্দ পাই

ঈদ আসে ঠিকিই,কিন্তু জীবনের জটিলতা এত বেড়েছে যে,কখন ঈদ এলো বা আনন্দ হল কি হল না টেরই পাই না। শুদু এতটুকু জানি ঈদের আনন্দ আর আগের মতো নাই।তাই ঈদের কথা মনে পড়লে এখনও নষ্টালজিয়ার আক্রান্ত হই।

ছোটবেলা ঈদের নতুন জামা আর জুতা লুকিয়ে রাখতাম।কেউ যেনো দেখে না ফেলে।এছাড়া কখন মেহমানরা বাসায় আসবে কখন সালামি পাব এমন উত্তেজনায় বুদ হয়ে থাকতাম।বড় হওয়ার পর সেলামি দিয়ে আনন্দ পাই।

লাবিবা আক্তার মুন, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.