The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা কলেজের হলে শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ

ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলে ম্যানার ভঙ্গ হয়েছে- এমন অভিযোগে ছাত্রদল নেতা মো. হাবিব হাওলাদার শিহাবসহ চার শিক্ষার্থী কর্তৃক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত হলের ৩০১ নম্বর রুমে ওই শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালায় অভিযুক্তরা।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নাম মারুফ রেজা। তিনি ২০২১-২২ বর্ষের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র।

অভিযুক্তরা হলেন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মো. হাবিব হাওলাদার শিহাব ওরফে আশফাকুর রহমান শিহাব, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান অর্ণব, অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সালাউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র আল রাহাত ওরফে আফজাল হোসাইন।

নির্যাতনের সাথে জড়িত আল রাহাত বলেন, ‘নির্যাতনের বিষয় না এটা, তার সাথে কথা বলা যাকে বলে। একটা ছেলে যদি বেয়াদবি করে, সরি না বলে উলটো সিনিয়র আনার হুমকি দিয়েছে। আমার রুমে গেস্ট আসতেই পারে। গেস্টের সাথে যদি সে বেয়াদবি করে, সেক্ষেত্রে ক্ষমা না চায়- তাহলে রুমে থাকা ঠিক হবে কিনা। মারধর তো আর করিনি- গালাগালি বলতে কীরকম, সরি না বলে যখন চুপ করে থাকে, চোখ পাকায়- সেক্ষেত্রে রাগ হবে এটা স্বাভাবিক।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, আমি মারুফ রেজা ঢাকা কলেজের ইংলিশ বিভাগের ২য় বর্ষের (২১-২২ সেশনের) ছাত্র। গতকাল রাতে আমার জীবনের সব থেকে জঘন্য কালো অধ্যায়ের রচনা হয়। ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলে ৩০১ নাম্বার রুমে গতকাল রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমার উপর চলে অকথ্য নির্যাতন। যারা নির্যাতন করে তারা হলো, রাহাত (দক্ষিণায়ন ৩০১, ম্যানেজমেন্ট ৪র্থ বর্ষ), সালাউদ্দিন (পরিচয় জানতে পারিনি), শিহাব (৪র্থ বর্ষ, নর্থ হল) এবং অর্ণব (৪র্থ বর্ষ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, দক্ষিণায়ন)। সালাউদ্দিন ভাই রুমে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিলো। এক পর্যায়ে আমি সালাউদ্দিন ভাইকে বলি ভাইয়া গালাগালি কইরেন না ছোট ভাই পড়ছে পাশে, এরপর আমার উপর তেড়ে আসে মারার জন্য। এক পর্যায়ে আমার রুমের রামিম ভাই এবং ৪ তলার রাহাত ভাই ঠেকাতে আসলে তাদের গালাগালি করে। এরপর রাহাত ভাই নর্থ হল থেকে সিয়াব ভাইকে ডেকে এনে রুম আটকায় দেয় এরপর রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমার উপর নির্যাতন করে এবং এক পর্যায়ে আমি স্যারদের বলার জন্য ফোন দিতে গেলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি সেসময় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তখন ডিপার্টমেন্ট বন্ধু সিআর ইমরানকে কল দিয়ে বাঁচাতে বললে সে রাত সাড়ে ৪টায় আমার হলে নিচে আসে তারপর আমি বের হই। তাকে সব বলি, সে আমাকে কলেজ গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে বড় ভাইয়ের ঢাবির হলে ঢুকে পড়ি। তারপর সকালে বাড়ি চলে আসি।

নির্যাতন করার সময় অভিযুক্ত হাবিব হাওলাদার, রাহাত, অর্ণব ও সালাউদ্দিন ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, যা প্রকাশ করার মতো নয়। এসময় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে বলেন, তোর বড় ভাই কে? বড় ভাইকে ফোন দে। তোর বড় ভাই কোন দল করে? শিবির করে? ছাত্রলীগ করে? ছাত্রদল করে- ফোন দে, ফোন দে।

একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। সেইসঙ্গে ভুক্তভোগীকে অভিযুক্তরা বলেন, তরে কে বাঁচাবে? তোর কে বড় ভাই আছে? তাকে ফোন দে- ইত্যাদি বলা হয়। এই কথার পর বেশ কয়েকটি মারের শব্দ শোনা যায়। পুরো সময়জুড়েই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. হাবিব হাওলাদার শিহাব বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত না, সেখানে আমি ছিলাম না।

তবে ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত রাহাত ও সালাউদ্দিন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে হাবিব হাওলাদার ছিলেন এবং তিনি ভুক্তভোগীকে গালাগাল ও হুমকি প্রদান করেন। এছাড়া হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন অভিযোগ রয়েছে হাবিব হাওলাদারের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজ নর্থ হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, হাবিব প্রায় সময়ই হলের জুনিয়র শিক্ষার্থীদেরকে গালাগাল ও মানসিক নির্যাতন করেন। জুনিয়রদেরকে বিভিন্ন আদেশ দেন এবং আদেশ না পালন করলে ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে হুমকি প্রদান করেন।

শিক্ষার্থী নির্যাতনে ছাত্রদলের নেতা জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, ঘটনাটা আমাদের এখনো কানে আসেনি। আমরা এখন ঘটনার জাস্টিফাই করব। জড়িত থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ঘটনার সত্যতার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে কাল দিনের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে ঢাকা কলেজ দক্ষিণায়ন হলের প্রভোস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি অবশ্যই শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শুরুতে যদি আমি কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ না করি তাহলে এটা অন্য রুমেও ঘটতে পারে। এমন পদক্ষেপ নিব, যেন ভবিষ্যতের শিক্ষা হয়ে থাকে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারুফের সাথে ফোনে কথা হয়েছে, ও বাড়িতে চলে গেছে। যেহেতু ও নাই এজন্য পদক্ষেপ নিতে পারছি না। আমি অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি। হলে শৃঙ্খলাবিরোধী যেকোনো বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ কে এম ইলিয়াস বলেন, ঘটনাটি বিস্তারিত জানার জন্য আমি হল প্রোভোস্টকে ডেকেছি। হল প্রোভোস্টের বক্তব্য অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.