আর মাত্র কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে বেশ শক্তভাবেই নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হচ্ছে, আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তিনি, পেয়ে গেছেন দলীয় টিকিটও। কিন্তু তার আশার গুড়ে যেন বালি পড়ে গেল।
নজিরবিহীন সাজার মুখে পড়ে এখন শেষ বয়সে ক্যারিয়ার নিয়ে টানাটানি। ব্যবসাসংক্রান্ত নথিতে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। আর এই মামলার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন একজন পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ২০০৬ সালে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। প্রায় দুই দশক পর সেই ঘটনায় খেসারত দিলেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারকরা ব্যবসাসংক্রান্ত নথিতে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এই মামলায় সরকারি কৌঁসুলিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
২০০৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদা অঙ্গরাজ্যের সীমান্তবর্তী লেক টাহোর একটি হোটেলের পেন্টহাউসে ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সেখানে তারকাদের একটি গলফ টুর্নামেন্ট দেখতে গিয়েছিলেন তারা। ট্রাম্প তাকে নিজের হোটেল স্যুটে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান।
এমনকি নিজের রিয়েলিটি টেলিভিশন শো ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’–এ অতিথি হওয়ার কথাও বলেন। এরই একপর্যায়ে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন ট্রাম্প। এ ঘটনা চেপে রাখতে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন তিনি। সেই তথ্যই ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক নথিতে গোপন করেছেন।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। আদালতের নথি থেকে জানা যায়, লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন তিনি। স্বল্প আয়েই মায়ের সংসারে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের শৈশব কেটেছে।
তিনি যখন হাইস্কুল শেষ করেন, তখন সময় সবচেয়ে ভালো ফল করা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন ছিলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। তিনি স্কুলের সংবাদপত্র সম্পাদনা করেছেন।
টেক্সাসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশুর ওষুধ নিয়ে পড়াশোনারও সুযোগ পেয়েছিলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। তবে সেখানে তার পড়া হয়ে ওঠেনি।
খরচ মেটাতে ১৭ বছর বয়সে সপ্তাহান্তে বিভিন্ন জায়গায় নাচতেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। পরে নগ্ন মডেলিং ও পর্নো ছবিতে অভিনয় শুরু করেন তিনি। নিজের সময়ে সবচেয়ে কম বয়সী পর্নো ছবির পরিচালকদের একজন ছিলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। অনেকগুলো পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
টেলিভিশন শোতে বিভিন্ন চরিত্রে এবং ‘দ্য ফোরটি-ইয়ার-ওল্ড ভার্জিন’ এবং ‘নকড আপ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন সাবেক এই পর্নো তারকা। তবে একটা সময় এই শিল্প ছেড়ে দেন তিনি। এরপর সফল ছবির স্ক্রিপ্ট এবং পরিচালনায় যুক্ত হন।
পর্দার আড়াল থেকে মেয়েকে বড় করে যাচ্ছিলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। কিন্তু ২০১৮ সালে তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে। এরপরই সব কিছু ওলট পালট হয়ে যায়।
ওই প্রতিবেদনেই ট্রাম্পের সঙ্গে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সাক্ষাতের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তবে ট্রাম্পের আইনজীবীদের অভিযোগ, ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনটি থেকে লাভবান হয়েছেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গে ড্যানিয়েলসের সাক্ষাতের বিষয়টি বানানো বলেও দাবি করেছেন তারা।