সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে (২২) গুলি করায় শিক্ষক রায়হান শরীফের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই শিক্ষকের পিস্তলটি অবৈধ ছিল, তিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তিনি টেবিলে পিস্তল রেখে ক্লাস নিতেন।
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (৪ মার্চ) রাত ১২টার দিকে আহত তমালের বাবা বগুড়ার ধনুট উপজেলার ধামাচামা গ্রামের আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, তার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছে। বিকেলে তমালের বন্ধু আক্তারুজ্জামান ফোন কল করে তমাল হাসপাতাল ভর্তি আছে বলে জানায়। খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জে এসে ছেলেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সংকটাপন্ন অবস্থায় দেখেন তিনি।
তমালের সহপাঠীরা জানান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তিনি সব সময় ব্যাগে অস্ত্র ও ছোরা নিয়ে ক্লাসে এসে অস্ত্র টেবিলের ওপর রেখে ক্লাসে লেকচার দিতেন। ছাত্র-ছাত্রীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্লাসে না আসতে বললে তিনি তাদের ভয়ভীতি ও গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আজ পরীক্ষা চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অহেতুক বকাবকি করেন। বকাবকির এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে তমালকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করেন। গুলিটি তার ডান পায়ের উরুর ওপরের অংশ লেগে গুরুতর জখম হন।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আহত ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এর আগেই অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে সেটি আগেই জব্দ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে পিস্তলটি অবৈধ। অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ উপসচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার ও কলেজ থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।