দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হতে যাচ্ছে। নতুন কমিটিতে নেতৃত্বের দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছে অছাত্ররা। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। ছাত্রলীগের ওই অংশের দাবি, ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দৌঁড়ে যারা এগিয়ে আছেন তাদের অধিকাংশই অছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তারা। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে ৪৫ ব্যাচ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে সেশনজট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শতভাগ আবাসনের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেছে জাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট থাকায় করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দেড় মাস পর ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হলে তোলা হয়। এরপরেও তাদের জায়গা হয়েছে গণরুমে। এই পরিস্থিতিতে ৪২ ব্যাচ থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসলে চলমান আবাসন সংকট তীব্রতর হয়ে উঠবে। ৪২ ও ৪৩ ব্যাচ থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসলে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট বৃদ্ধি পাবে এবং বিশৃঙ্খলা রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্তিমিত ছিলো ছাত্রলীগের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখাগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি। ফলে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এজন্য ছাত্রত্ব থাকা ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে নেতৃত্বের পরিপক্কতা আসেনি। এছাড়া করোনার শুরু থেকেই যারা জাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বের জন্য দৌঁড়াচ্ছিল তাদেরকে বাদ দেওয়া কঠিন। তাদের পরিশ্রমকে আমরা অবমূল্যায়ন করতে পারি না।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘জাবি শাখার কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যেকোন দিন কমিটি ঘোষণা হতে পারে। এক্ষেত্রে ১২ থেকে ২০ সদস্যের সুপার কমিটি হবে।’
জানা যায়, ৪২ ব্যাচ থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক হওয়ার চেষ্টা করছে- আকলিমা আখতার এশা, আক্তারুজ্জামান সোহেল, মাহবুবুল হক রাফা, আজিজুর রহমান লিলু, ইসমাঈল হোসেন, অভি তালুকদার, নীলাদ্রী শেখর মজুমদার ও রতন বিশ্বাস। ৪৩ ব্যাচ থেকে তদবির করছে এনামুল হক, আরিফ আহমেদ, আব্দুর রহমান ইফতি, আলম শেখ, হাফিজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান লিটন, রাকিবুল ইসলাম শাওন। অন্যদিকে ৪৪ ব্যাচ থেকে ইমরান আহমেদ, আসাদুজ্জামান, লেলিন মাহবুব, রাশেদ আল নাঈম, চিন্ময় সরকার, সাজ্জাদ হোসেন ও মাহফুজ রহমান নেতা হওয়ার প্রচেষ্টা করছেন। তবে ৪৩ ও ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের জন্য চেষ্টা করলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পছন্দ ৪২তম ব্যাচ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘করোনার পূর্বে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিলো শুধুমাত্র নিয়মিত ছাত্রদের হলে আবাসনের ব্যবস্থা করা। আমরা সেটা করার চেষ্টা করেছি। এখন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে অছাত্ররা আসলে কৃত্রিম আবাসন সংকট তৈরি হবে। বিশেষ করে ছাত্রদের হলগুলোতে। সেটা ভাববার বিষয়। কারণ সিনিয়র অছাত্ররা থাকলে জুনিয়র অছাত্ররাও থাকবে। প্রভোস্ট কমিটি এ নিয়ে আলোচনা করবে। এছাড়া সকল ছাত্রসংগঠনের সাথে প্রভোস্টবৃন্দ কথা বলবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আমাদের আহবান যেন নিয়মিত ছাত্ররাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে আসে। যারা নীতি নির্ধারণ করে তাদের সাথে কথা হয়েছে। আমরা সবসময় বলেছি যারা ছাত্র নয় তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব না দিতে। এরপরেও দিলে কিছু করার থাকবেনা, অসন্তোষ ছাড়া। যে ছাত্র নয় তার ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতিতে থাকা উচিত না। এজন্য ছাত্রলীগের কমিটি ৪৪ ব্যাচ থেকেই করা ভালো।’
এর আগে গত ১৭ অক্টোবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তখন থেকে শুরু হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৌঁড়ঝাপ।