জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের A ও D ইউনিটে শীর্ষ পজিশন দখল করতে বিষয় ভিত্তিক প্রিপারেশন নিয়ে বিস্তারিত
পদার্থ – জাবিতে পদার্থ প্রশ্নগুলো, গনিত ও রসায়ন থেকে একটু কঠিন হয়। পদার্থ অংশ থেকে ২২ টি প্রশ্ন থাকে। ৮/২২ টি প্রশ্ন একটু কনসেপ্ট বেজড হয়। ম্যাক্সিমাম শিক্ষার্থী ২২ টি থেকে ১২ কিংবা ১৪ মার্ক সহজে পেয়ে যায়। কিন্তু চান্স পেতে আরো বেশি মার্ক তুলার চেষ্টা তো করতেই হবে।
প্রথমত প্রতিটা অধ্যায়ের মূল কনসেপ্ট ও প্রতিটি টপিক ক্লিয়ার থাকা লাগবে। সেট ভিত্তিক প্রশ্ন হওয়ায় মূল বই এর যেকোনো জায়গা থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। পদার্থের থিওরি না বুঝলে পদার্থ পড়ে মজা পাবে না। আনন্দ নিয়ে পড়তে হবে। বুঝে গেলেই আলাদা একটা কনফিডেন্স কাজ করে।
সকল সূত্র গুলো আলাদা পেজে নোট করে চর্চা করতে হবে। ভেঙে ভেঙে সূত্র গুলো অন্য সূত্রে কনভার্ট করা জানতে হবে।
যেমন F= ma F= dv × (v-u/t) ইত্যাদি
একক ও মাত্রা গুলো নাগালে রাখতে হবে। মূল বই এর অনুশীলনীর MCQ গুলো অনেক সময় পরীক্ষায় হুবহু উঠিয়ে দেয়। বিগত প্রশ্ন গুলো বারংবার হাতে কলমে লিখে লিখে চর্চা করলে মূল ভর্তি পরীক্ষায় সহজে প্রয়োগ করতে পারবে। জাবির পাশাপাশি ঢাবি, চবি, রাবি ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নও সল্ভ করে রাখা উচিত।
রসায়ন- জাবির A ও D উভয় ইউনিটেই রসায়ন থাকে। A ইউনিটের রসায়ন মোটামুটি সহজ হলেও জাবির D ইউনিট এর রসায়ন এর কিছু প্রশ্ন একটু ডিপ হয়। D ইউনিটে ম্যাথমেটিকেল টার্ম কম থাকে। ২ – ৪ টা ম্যাথ টার্ম থাকে।
A ইউনিটে ২২ টি
D ইউনিটে ২৪ টি প্রশ্ন থাকে “রসায়ন” অংশ থেকে।
D ইউনিটে রসায়ন এর ২৪ টি থেকে ১৩-১৪ টি প্রশ্ন সহজে পারা যায়। বাকি গুলো পারতে গেলে মূল বই এর প্রতিটি লাইন বুঝে বুঝে পড়তে হবে। ছোট ছোট ইনফো গুলো মুখস্থ রাখতে হবে। যেমন : ডি ইউনিটে কর্মমুখী রসায়ন অধ্যায় থেকে দুই থেকে তিনটি প্রশ্ন থাকে সেগুলো মূল বই এর তথ্য থেকে তুলে দেয়। যেমন মাখনে কত % পানি থাকে? ইত্যাদি। A ইউনিটের রসায়ন অংশে ম্যাথমেটিকেল ও থিওরেটিকেল উভয় ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই উভয় কনসেপ্ট ই ক্লিয়ার রাখা লাগবে।
মূল বই এর অনুশীলনীর বিভিন্ন প্রশ্ন জাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রায়ই আসতে দেখা যায়। জৈব রসায়ন স্কিপ না করাই ভালো। কারণ জাবিতে ১-২ মার্ক এর জন্য পজিশন অনেক আগে পিছে চলে যায়। মেকানিজম বুঝে বুঝে পড়তে চেষ্টা করবে। বিজ্ঞানীর নামীয় সকল বিক্রিয়া মনে রাখতে হবে। এছাড়া বিগত বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা প্রশ্ন গুলো বারংবার চর্চা করবে। সেই টপিক গুলো ডিটেইলস এ পড়ে নিতে হবে। জৈব রসায়নের জন্য হাজারী স্যার এর মূল বই রিডিং পড়বে আর বোর্ড MCQ + বিগত প্রশ্ন (মাস্ট)
গনিত- জাবির A ইউনিটে উচ্চতর গনিত থাকে। প্রশ্ন সহজ হয় কিন্তু সময় কম থাকে। ৫৫ মিনিট সময় থাকে ৮০ টি MCQ এর জন্য।
ম্যাথ থেকে ২২ টি প্রশ্ন থাকবে। অনেকে ম্যাথ এর কনসেপ্ট অনেক ভালো বুঝে কিন্তু সলভিং স্পিড কম থাকায় চান্স মিস করে। সুতরাং এতো বেশি চর্চা করতে হবে যেন প্রশ্ন দেখার সাথে সাথেই সল্ভ করে সঠিক উত্তর দাগানো সম্ভব হয়। কারণ জাবিতে সময় এর বিপরীতে বেশি প্রশ্ন দাগাতে হয়।
মূল বই এর বড় ম্যাথ করার একদমই প্রয়োজন নাই। ছোট ম্যাথ গুলো করলে কাজে দিবে। বিগত প্রশ্ন গুলো এত বেশি সল্ভ করতে হবে যেন উত্তর মুখস্থ হয়ে যায়। মেইন এক্সামে প্রশ্ন দেখার সাথে সাথেই সলভিংয়ে যাওয়ার ক্যাপাবিলিটি গ্রো করতে হবে।
দীর্ঘদিন ম্যাথ প্রাক্টিস এ রাখো। তাহলে মূল এক্সামে দেখবে সব সহজ লাগবে। এক্সাম দিয়ে নিজেকে যাচাই করবে বেশি বেশি। ভুল গুলো শুধরে নিতে হবে।
ম্যাট্রিক্স ও নির্ণায়ক, সরলরেখা, যোগজিকরণ, অন্তরিকরণ, বহুপদী, জটিল সংখ্যা, কনিক, ত্রিকোণমিতি এসব অধ্যায় থেকে বিভিন্ন টপিক প্রতিবছর রিপিট পাওয়া যায়। ম্যাথ গুলোর শর্ট কাট ফলো করবে। গতিবিদ্যা, স্থিতিবিদ্যা থেকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন হয়।
বায়োলজি- জাবির “ডি” ইউনিটে ৮০ টির মধ্যে ৪৪ টি প্রশ্ন ই আসে জীববিজ্ঞান থেকে। প্রাণীবিজ্ঞান” অংশ থেকে ২২ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান” থেকে ২২ টি প্রশ্ন থাকবে। এই ইউনিটে বায়োলজি রিলেটেড কিছু স্বনামধন্য বিষয় রয়েছে।
জাবিতে প্রতিবছর সেট আকারে প্রশ্ন হওয়ায় ঘুরে ফিরে কিছু টপিক রিপিট আসতে দেখা যায়। তাই বিগত প্রশ্ন অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে সল্ভ করতে হবে। একটি সেট এ যদি প্রশ্ন হয়, মাইটোকন্ড্রিয়ার আবিষ্কারক কে? তাহলে অন্য সেট এ থাকবে ক্রোমোজোম এর আবিষ্কারক কে? স্যার রা এভাবে প্রশ্নের মান সমান রাখার চেষ্টা করেন। তবুও কিছু বৈষম্য এসে যায়। তবে সেটা নিয়ে ভাবা যাবে না। যেখান থেকেই প্রশ্ন হোক, তোমাকে সঠিক দাগাতে হবে।
বায়োলজি অংশের জন্য মূল বই এর বিকল্প নেই। আবুল হাসান স্যার ও গাজী আজমল স্যার এর বই পড়লেই এনাফ। বারংবার অধ্যায়গুলো রিডিং পড়তে হবে। বিভিন্ন ছন্দ দিয়ে নিজের মত করে তথ্য গুলো মনে রাখতে হবে। বোর্ড এর MCQ গুলো আয়ত্তে রাখবে। অধ্যায় গুলোর উপর বারবার এক্সাম দিয়ে নিজেকে যাচাই করে নিতে পারো।
IQ_আইকিউ– D ইউনিটে ৪ টি প্রশ্ন থাকে IQ অংশ থেকে।
বিগত আইকিউ প্রশ্ন গুলো হাতে কলমে সল্ভ করবে। রিসেন্ট বিসিএস এর আইকিউ প্রশ্ন দেখা যেতে পারে। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার IQ প্রশ্ন জাবি ভর্তি পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়।
ICT_আইসিটি– A ইউনিটে ৮ টি প্রশ্ন থাকে ICT থেকে।
বোর্ড MCQ অর্থাৎ মূল বই এর অনুশীলনীর MCQ পড়লেই হবে। আর বিগত BCS ICT প্রশ্ন গুলো দেখা যেতে পারে। ব্যাসিক ঠিক থাকলে এমনিতেই ৪-৫ টা পারবে।
বাংলা_ইংরেজি– A ইউনিটে বাংলা থেকে ৩ এবং ইংরেজি থেকে ৩ টি প্রশ্ন হয়। D ইউনিটে বাংলা ৪ এবং ইংরেজি ৪ মার্ক এর প্রশ্ন হয়ে থাকে।
বাংলা ও ইংরেজির জন্য বিগত ১০ বছরের প্রশ্নগুলো পড়লেই হবে। পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলোও দেখা যেতে পারে। মূলত প্রশ্নব্যাংক এর শেষের সিলেক্টেড টপিক গুলো পড়লে মোটামুটি কভার হয়ে যায়।
দেশের অন্যতম মায়াবী ক্যাম্পাস “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে” চান্স পেতে চাইলে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে গ্রুপে না ঘুরে, টেবিলে নিজেকে সময় দেও। তীব্র প্রতিযোগীতা পেরিয়ে জাবিয়ান” হতে হবে। আল্লাহ ভরসা।
লিখেছেন: মো. সানজিদুর রহমান নবেল, রসায়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।