জাবি প্রতিনিধিঃ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রশাসনের কর্মকান্ডকে অগণতান্ত্রিক দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। শনিবার (১০ জুন) জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র সামিউল ইসলাম প্রত্যয় তিনটি দাবিতে গত ৩১ মে থেকে প্রায় ১৮৫ ঘণ্টা (৮ দিন) অনশন কর্মসূচি চালিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ধারা ৪ অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হলে আবাসন নিশ্চিত করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে হল তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে আবাসনের মৌলিক অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনশন পালন করা শিক্ষার্থীর প্রত্যেকটি দাবি ন্যায্য হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একদল উশৃঙ্খল কর্মী রাতের আঁধারে অনশন পালনকারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। এই পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, আবাসন সংকটের মূল কারণ হচ্ছে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থাকা ঐ বিশেষ ছাত্র সংগঠনের স্বেচ্ছাচারিতা ও দখলদারিত্ব।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান না থাকার পেছনে এ ধরনের দুর্বৃত্তায়ন ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিদের উস্কানিমূলক বক্তব্য বিশেষভাবে দায়ী বলে আমরা মনে করি। অনতিবিলম্বে হল, শ্রেণিকক্ষ, বিভাগ এবং ক্যাম্পাসে দল-মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা লিখিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আগামী ৮ জুলাই ২০২৩ এর মধ্যে গণরুম বিলুপ্ত করা, অছাত্রদের বের করা ও বৈধ ছাত্রদের আসন বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেটের মাধ্যমে নির্বাচিত বর্তমান উপাচার্যকে সকল মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদ নির্বাচনের বিষয়ে একাধিকবার সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবং বিবৃতির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলেও তিনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি নীতি-নির্ধারণী পর্ষদ প্রায় ৫ বছর পূর্বেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। অনতিবিলম্বে সকল মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ, নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে সকল ধরনের যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিষ্পত্তি এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করে প্যান্ডেল কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার প্রশাসনকেই বহন করতে হবে।
বিবৃতিতে ৬৭ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ড. মোঃ মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, অধ্যাপক ড. মোহামদ নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোঃ শামছুল আলম, অধ্যাপক ড. মোহম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. ছালেহ আহমেদ খান, অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর, অধ্যাপক ড. নাজমুল আলম, অধ্যাপক ড. মোঃ সোহেল রানা, অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মাদ শরিফুল হুদা, অধ্যাপক ড. মোঃ মনজুর ইলাহী, অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মোঃ মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।