জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-২০১০সেশন) শিক্ষার্থী জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরকে আহ্বায়ক ও ৪০ তম ব্যাচের (২০১০-১১ সেশন) ওয়াসিম আহমেদ অনিককে সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে
বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেন।
ছাত্রদলের অতীত কমিটি ঘেটে দেখা যায়, ২০০৮,২০১১, ২০১৬ সালে কমিটি হয়েছে যথাক্রমে ৩১,৩৩, ৩৭ ব্যাচ থেকে। ২০০৮ সালে আহবায়ক সামসুজ্জোহা পারভেজ ৩১ ব্যাচ সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউর রহমান ৩১ ব্যাচ, ২০১১ সালে সভাপতি জাকিরুল ইসলাম ৩৩ ব্যাচ সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ ভুইয়া ৩৩ ব্যাচ, ২০১৬ সভাপতি সোহেল রানা ৩৭ ব্যাচ সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকত ৩৮ ব্যাচ এই হিসেবে ২৪ সালে এসে কমিটি হওয়া উচিত ছিল ৪৫/৪৬ ব্যাচ থেকে। অথচ তা না হয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে ৩৯ ব্যাচ থেকে। ক্যাম্পাসে এখন চলে ৫৩ ব্যাচ। অর্থাৎ, বর্তমান কমিটির নেতারা ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের চেয়ে প্রায় ১৫ বছরের বড়। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, কার স্বার্থে এবার ৩৯/৪০ থেকে কমিটি হলো ?
পদপ্রত্যাশী এক ছাত্রদল কর্মী বলেন, স্বীকৃতির দোহায় দিয়ে অছাত্রদের পূনর্বাসন করা হয়েছে । আমরা দেখছি সাবেক শিক্ষার্থীদের পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু, তারা ত অতীতে সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক পদ পেয়েছেন। রাজনীতি করতে চাইলে সেন্ট্রালে অথবা যুবদলে গেলেও ত পারেন। এত সিনিয়র ব্যাচ থেকে কমিটি দেওয়ার মানেই হলো, কোন দুরভিসন্ধি আছে।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ছাত্ররাজনীতির লাগাম রানিং শিক্ষার্থীদের হাতেই থাকা উচিত। অন্যথায় এটির অপব্যবহারের মাত্রা অনেক বাড়বে। অতীতের ন্যায় হলের সীট দখল, সীট বণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদের আস্ফালন, মাদক ব্যবসা, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদির মাত্রা কমিয়ে আনতে রানিং ছাত্রদের দ্বারাই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হওয়া প্রয়োজন। ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, রানিং ছাত্র কমিটিতে আসলে তাদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর চলে যাওয়ার তাগিদ থাকে। পড়াশুনার পাশাপাশি অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। অছাত্ররা কমিটিতে এলে তারা হলের সীট দখল করে রাখে এতে সীট সংকট তৈরি হয়। ফলস্রুতিতে গণরুম,গেস্টরুমের কালচার ফিরে আসার পথ তৈরি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি ছাত্রদলের এক অছাত্র কর্মী ক্যাম্পাসের শিক্ষককে অপদস্ত করেছেন এবং ধর্মীয় পোশাক নিয়ে কটুক্তি করেছেন। অ-ছাত্ররা কোন অপকর্ম করলে তাদের শাস্তি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের সকল অপকর্মের মূলে থাকে অছাত্ররা। তারা শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে যাচ্ছেতাই করে। এজন্য আমরা চাইনা ছাত্ররাজনীতির নামে অছাত্রদের পূনর্বাসন এই ক্যাম্পাসে হউক। পদপ্রত্যাশী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাইনা ছাত্রদলে অ-ছাত্রদের আগমন ঘটুক। নতুন নেতৃত্বই পারে স্মার্ট ওয়ে তে দলকে গতিশিল করতে। তারুণ্যের শক্তিকে মুল্যায়ন করা হবে এটাই প্রত্যাশা। আমাদের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বর্তমান ছাত্রদের সমন্বয়ে কমিটি দেবে এটাই চাই।
নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙে আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ আমাদের একটি সাংগঠনিক কাঠামো উপহার দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল ভাই এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এটি মূলত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানোর জন্য স্বল্পকালীন কমিটি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সবগুলো হল কমিটি, ফ্যাকাল্টি এবং বিভাগ কমিটি গঠন করে সন্মেলনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবো ইনশাআল্লাহ।