জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় শিফট বৈষম্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান অভিযোগ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নের ফলে মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবী বাছাই করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিফট পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিলেও ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশিত হয়। এতে করে দেখা যায় যেকোনো একটি শিফট থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে অথবা যেকোনো একটি শিফট থেকে মেধাতালিকায় শীর্ষদের অবস্থান বেশি। ভিন্ন প্রশ্নের কারণে প্রশ্নপত্রের মান একই থাকছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এবারও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দৈনিক পাঁচটি শিফটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বি’ ইউনিটের (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ) ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ৫টি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৩৮৬ টি আসনের মধ্যে শুধু ৫ম শিফট থেকেই মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৭৫ জন, যা মোট আসনের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
অন্যদিকে প্রথম শিফটে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন মাত্র ৩৪ জন, যা মোট আসনের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া দ্বিতীয় শিফটে ৫৮ জন, তৃতীয় শিফটে ৫১ ও চতুর্থ শিফটে ৬৭ জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন।
তাদের মধ্যে শুধু ৫ম শিফটে মেধাতালিকায় শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে প্রথম ২০ জনের মধ্যে মেয়েদের তালিকায় ১১ জন এবং ছেলেদের তালিকায় ১৩ জন রয়েছেন।
এবার ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩৮৬টি (ছাত্র ১৯৩, ছাত্রী ১৯৩) আসনের ১০ গুণ ৩ হাজার ৮৬০ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ফল প্রকাশের পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় ‘একক প্রশ্নপত্রে মূল্যায়ন চাই’ প্ল্যাকার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন শোভন রায় নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। ‘বি’ ইউনিটে অকৃতকার্য শোভন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি পরীক্ষার যে শিফট পদ্ধতি এটা বৈষম্য। এতে কোনভাবেই শিক্ষার্থীর মেধার সঠিক যাচাই হয় না। কোন শিফটের পরীক্ষা সবচেয়ে সহজ হয়, আবার কোন শিফটে পরীক্ষা একদম কঠিন হয়। এতে একেক শিফট থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী চান্স পায় আর অন্য শিফট থেকে কম চান্স পায়। আমার পরীক্ষা অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও আমার হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিফট পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয় এটা বাতিল করা হোক।’
এদিকে শোভন রায়কে সমর্থন জানিয়ে জাবির ‘এ’ ইউনিটের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘এখানকার শিফট পদ্ধতির মতো পরীক্ষা দেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। এটা কেন? এটার মাধ্যমে তো সব শিক্ষার্থীকে এক মাপকাঠিতে যাচাই করা হচ্ছে না। তাহলে এরকম বৈষম্য আমরা কিভাবে মেনে পারি? আমরা চাই শিফট পদ্ধতি বাতিল করা হোক। সবাইকে একক প্রশ্নে মূল্যায়ন করা হোক।’
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, আমরা আস্তে আস্তে এটি কমানোর চেষ্টা করছি। আগামীতে শিফট কমিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেবো। পরীক্ষা সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।