The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

জাদুঘরে চাকরির সুযোগ নেই প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর, ঢাকা ও সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি মিউজিয়াম, কুষ্টিয়া সম্প্রতি লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই তিন জাদুঘরে ১৮ পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু এসব পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি। এ নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বর্তমানে দেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালু আছে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খোলা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, জাতীয় জাদুঘরসহ ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ করার জন্য দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিভাগ চালু করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ মিলে ৬০০-৭০০ শিক্ষার্থী প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে পড়াশোনা করছেন। প্রতি বছর প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী পাস করে বের হন।
স্বাধীনতা জাদুঘরের সহকারী কিপার (ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা) পদে আবেদনের জন্য ইতিহাস বা ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে প্রথম শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চাওয়া হয়েছে।

এ পদে ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাসে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদনের সুযোগ রাখা হলেও প্রত্নতত্ত্ব থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের আবেদন করার সুযোগ নেই। এ নিয়ে প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন ২৪টি জাদুঘরের কোনো পদের চাকরিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার নেই। জাদুঘর পরিচালনার জন্য যখন নীতিমালা করা হয়েছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ছিল না। সেই পুরোনো নীতিমালায় এখনো চলছে। নীতিমালার আধুনিকায়ন করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রোস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে প্রাচীন, মধ্যযুগ ও আধুনিক বাংলার ইতিহাস, জাদুঘর ও উচ্চতর জাদুঘর বিদ্যা, হেরিটেজ ব্যবস্থাপনাসহ জাদুঘর–সংশ্লিষ্ট আরও অনেক বিষয় পড়ানো হয়। জাদুঘরে ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণসহ জাদুঘর পরিচালনার সব বিষয় আমরা প্রথম বর্ষ থেকে হাতেকলমে পড়ি। জাদুঘর নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশোনা থাকার কারণে এখানে চাকরিতে আমরাই প্রধান দাবিদার। কিন্তু সেখানে আমাদের আবেদনের সুযোগ না রাখা অন্যায়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয় যারা এ রকম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাদের জাদুঘর পরিচালনার ন্যূনতম জ্ঞান নেই। তাদের অজ্ঞতা ও হীনমন্যতার কারণে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি। জাদুঘরের চাকরিতে যেখানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, সেখানে তাদের জন্য সুযোগ না রাখা দুঃখজনক।’

এ কে এম শাহনেওয়াজ আরও বলেন, জাদুঘর পরিচালনার জন্য যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ রয়েছে, সেখানেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকদের রাখা হয় না। অথচ শিল্প ও ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ হিসেবে এ বোর্ডে প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষকদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা।

সহকারী কিপার পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ না থাকার বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগবিধিতে যেভাবে বলা হয়েছে, সেসব নিয়ম অনুসরণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়োগবিধির বাইরে আমাদের করার কিছু নেই।’

জাদুঘরের এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দ্রুত সংশোধন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রক্রিয়ায় যাঁরা নিয়োগ পাবেন, তাঁরা ৩০-৩৫ বছর ধরে চাকরি করবেন। ফলে একটা ভুল আবার দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। তাই এখনই এ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা দরকার। দেশের জনগণের করের টাকায় তৈরি হওয়া প্রত্নতত্ত্বের দক্ষ কর্মীদের জাদুঘরের উন্নয়নে কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা রাষ্ট্রীয় অর্থ ও মেধার অপচয়। প্রতিবছর তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী পাস করে বের হন। পাস করার পর তাঁরা যদি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও জাদুঘরেই চাকরির সুযোগ না পান, তাহলে তাঁরা যাবেন কোথায়?

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.