জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় চলতি মাসের ০২ অক্টোবর। এই পরীক্ষায় পাস করেছেন ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এতে অর্থনীতি বিভাগের ফলাফলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিভাগটিতে পাসের হার এবং ফার্স্ট ক্লাসের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি কলেজে বিভাগটির ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় এতে অন্তত ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।
চলতি বছরের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফেল করা বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি কোর্সের। আর যারা পাস করেছেন তাদের অধিকাংশই এ দুই বিষয়ে ‘ডি’ ও ‘সি’ গ্রেড নিয়ে পাস করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের স্বনামধন্য ১৩টি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০১৯ সালের ফলাফলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এবার সিলেট এম.সি কলেজের ৬৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ১২৩ জন, ফেল করেছেন ৫২০ জন। পাসের হার ১৯.২, ফেল ৮০.৮ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পান সাইরা খাতুন (৩.৬১)।
চট্টগামের সরকারী মহসিন কলেজে ৬১৩ জনের মধ্য ফেল করেন ৪৬০ জন। পাস করেন ১৫৩ জন। পাসের হার ২৫ শতাংশ, ফেলের হার ৭৫ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পান মো. তানিমুল হাইদার (৩.৫০)। বগুড়ার সরকারী আজিজুল হক কলেজে ৪৮৪ জনের মধ্য পাস করেন ১১৫ জন এবং ফেল করেন ৩৬৯ জন। পাসের হার ২৩.৮ ও ফেল ৭৬.২ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট মোছা. সাকিলা খাতুন (৩.৩৪)।
বরিশালের সরকারি বি.এম. কলেজে ৩৬৩ জনের মধ্যে ২৬৫ জনই ফেল এবং পাস করেন মাত্র ৯৮ জন। পাসের হার ২৭.০ ও ফেল ৭৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট লিমা আক্তার (৩.৪২)। রংপুরের কার মাইকেল কলেজে ৭১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেন ৪২৭ পাস করেন ২৮৫ জন। পাসের হার ৪০.০, ফেল ৬০.০ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট মোছা. মৌসুমি আক্তার (৩.৩৪)।
গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ২৬১ জনের মধ্যে পাস করেন ৬৬ এবং ফেল ১৯৫ জন। পাসের হার ২৫.৭, ফেল ৭৪.৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট সুমাইয়া সারা (৩.৩৮)। ঢাকা সিটি কলেজে ৩১৪ জনের মধ্যে মাত্র ৯৬ জন পাস করেন ফেল ২১৮ জন। পাসের হার ৩১.০, ফেল ৬৯.০ শতাংশ। চট্টগ্রাম কলেজের ৭৭৬ জনের মধ্যে ফেলই করেন ৫৩৮ জন, পাস করেন ২৩৮ জন। পাসের হার ২৯.৫, ফেল করেন ৭০.৫ শতাংশ।
তবে ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন শিক্ষকরা। জানতে চাইলে এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আইয়ুব বলেন, শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা কাউকে ক্লাসে দেখি না। ক্লাস করে না। পরীক্ষার একমাস আগে একটা গাইড বই কিনে সামান্য প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেয়। পড়ালেখার প্রতি কোন গুরুত্ব নেই।
পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন কঠিনভাবে খাতা মূল্যায়নের কারণে ফেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, খাতা মূল্যায়নে কোন সমস্যা নেই। অর্থনীতি বিষয়ে অনেক অংক থাকে যদি সঠিক না হয় তাহলে তো নাম্বার দেয়ার সুযোগ নেই। খাতায় সঠিক লিখা থাকলেইতো আমার নম্বর দিবো।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, যারা খাতা মূল্যায়ন করেন অথাৎ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিরোধী না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা মূল্যায়নের যে পদ্ধতি তাতে কোন শিক্ষক কোন কলেজের খাতা মূল্যায়ন করছেন সেটা জানারও সুযোগ নেই। প্রত্যেক শিক্ষকের খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ভিন্ন রকম। কেউ নাম্বার কম দেয় কেউ বেশি দেয়। কিন্তু শিক্ষকরা কখনই ইচ্ছা করে শিক্ষার্থীদের ফেল করান না।
তিনি বলেন, দেখা যায় শিক্ষার্থী পাস করলে সেটা তার ক্রেডিট। আর ফেল করলে সেটা শিক্ষকের দোষ। শিক্ষক ফেল করিয়ে দিয়েছে। সে ফেল করেনি তাকে ফেল করানো হয়েছে। এখন সমস্যা হলো অর্থনীতি একটা ভালো বিষয় এবং একটু কঠিনও আছে। আর যে কোর্সে বেশিরভাগি শিক্ষার্থী ফেল করেছন হয়তো কোর্সটি একটু কঠিন ছিলো। হতে পারে প্রশ্নও কঠিন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়েননি। এজন্য হয়তো এমন হয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখবো। আসলে কি হয়েছিলো। কেন এই ফলাফল বিপর্যয়। আমাদেরতো খাতা পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ নেই। পুনঃনিরিক্ষা করতে পারবে। কারও নম্বর গণনায় ভুল হলে বা নম্বর যোগ না হলে সেটা ঠিক করে দিতে পারেব। খাতা মূল্যায়নের সময় একটু এদিক-সেদিক হতে পারে। কেউ ২০ পাওয়ার থাকলে তাকে হয়তো ১৮ দিয়েছে। কিন্তু কেউ ১০ পেলে তাকে তো দুই দেবে না। তবুও বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো।