বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু অর্থায়ন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি’- শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আয়োজনে এবং একোয়াকালচার বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের জাতীয় মনোনীত কর্তৃপক্ষ (এনডিএ) এবং সরাসরি প্রবেশাধিকার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যেন তারা জিসিএফ-এর তহবিল সহজে ব্যবহার করতে পারে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিকেএসএফ-এর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, যিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জলবায়ু অর্থায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন বাকৃবির একোয়াকালচার বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার হাশেম এবং সঞ্চালনা করেন একই বিভাগের লেকচারার মো. হামিদুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম, ফিশারিজ ম্যানেজমেট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. আরিফ হাসান খান রবিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালীন ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ জিসিএফ-এর অর্থায়নে বাংলাদেশে বর্তমানে চলমান সম্প্রসারিত সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প-খরা, সম্প্রসারিত সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প-বন্যা, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য টেকসই বসতভিটা এবং জীবিকাসহায়তা, টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক খাতে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিতকরণ, গ্লোবাল ক্লিন কুকিং প্রোগ্রাম, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য উপকূলীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো মূলধারায় সংযুক্তকরণ, বৃষ্টির পানিকে সরাসরি ভূ-গর্ভস্থ পানি হিসেবে সংরক্ষণসহ মোট নয়টি গবেষণা কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। প্রতিটি গবেষণা কাজের উদ্দেশ্যই হলো পরিবেশ সংরক্ষণ।
পাশাপাশি কর্মশালায় উপস্থিত গবেষকবৃন্দের সাথে জলবায়ু সংরক্ষণের সাথে জড়িত গবেষণা ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদ ব্যবহারের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। জলবায়ু সংরক্ষণে সহায়ক হবে এমন ধরনের গবেষণা এবং চলমান গবেষণাগুলো থেকে জলবায়ু সংরক্ষণের উপায় বের করার বিষয়েও আলোকপাত করেন তিনি। এসকল কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অঅংশগ্রহণের বিষয়েও জোর দেন তিনি।
কর্মশালা শেষে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা চলমান প্রকল্প এবং গবেষণাকে আরও ফলপ্রসূ করার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।
কর্মশালার প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের কৃষি, মৎস্য, বনজ সম্পদসহ সার্বিক জীববৈচিত্র্যের ওপর এই পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। এ প্রেক্ষাপটে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সঠিক পরিকল্পনা এবং অর্থায়নের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ)-এর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিশেষ করে, এই কর্মশালার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় মনোনীত কর্তৃপক্ষ (এনডিএ) এবং সরাসরি প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির যে প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের দেশের জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।