The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪

জবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা বলছে পরিবার

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টে অজ্ঞানরত অবস্থায় রাজু মারা গেলেও ঘটনার চার দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান রাজুর বাবা।

রাজুর পরিবার ও তার বন্ধুরা জানান, গ্রামের বাড়ী পঞ্চগড় থেকে শনিবার ঢাকায় ফিরে পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি মেসে হটাৎ খিচুনি দিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। পরবর্তী অবস্থা খারাপ দেখে রাজুর সহপাঠী ও মেসের অন্যান্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রাজুর পরিবারের দাবি, তাদের বাসার টিউবওয়েলের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘুমের ওষুধ বা এমন জাতীয় কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বিষক্রিয়ায় রাজুর মৃত্যু হয়েছে। একই টিউবওয়েলের পানি পান করে রাজুর পরিবারের বাকি সদস্যরাও বমি করে ও দুইদিন অতিরিক্ত ঘুমে মগ্ন ছিলেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

রাজুর বাবা কৃষক আকতারুল ইসলাম বলেন, ঘটনার আগেরদিন শুক্রবার সকাল ১০টার সময় রাজু, রাজুর মা এবং বোন একসাথে খাবার খান। খাবার খাওয়ার পর রাজুর মা ও বোনের বমি হয়। আমি সকালের নাস্তা ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে মাঠে বীজ বুনতে যাই। এরপর বাসায় ফিরে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে শরীর খারাপ অনুভব করি। পরে বাসায় ফিরে দেখি রাজু, রাজুর মা ও আমার ছোট মেয়ে ঘুমাচ্ছে। মাঠে কাজ থাকায় শরীর খারাপ লাগলেও আমি কাজে চলে যাই। এরপর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে দেখি, ওরা সবাই তখনও ঘুমাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় বোন (রাজুর ফুফু) ওদেরকে ডাকাডাকি করলেও কোন সাড়াশব্দ দেয়নি। রাত সাড়ে ৯ টায় রাজুর ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন থাকায় রাত ৮ টার দিকে তাকে টেনে তুলে তার ফুফু। ততক্ষণে শরীর খারাপ থাকায় আমিও ঘুমিয়ে যাই রাজু’র ফুপু, ওকে তুলে দিয়ে, জামা কাপড় গুছিয়ে দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় রান্না করা খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে রাজু বাসার পাশের এক ভ্যান গাড়ি চালকের ভ্যান গাড়িতে তুলে দেয়। তিনি রাজুকে স্টেশনে পৌঁছে দেন। সেখানে রাজুর ক্লাসমেট একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়ার সাথে তার দেখা হয়।

রাজুর বাবার ভাষ্যমতে, ভ্যানচালক সাদিয়াকে রাজুকে একটু দেখে রাখতে এবং তার বাসায় সবাই যে অসুস্থ সে বিষয়টিও জানান। পরবর্তীতে ঢাকার ট্রেনে উঠার আগেই রাজু তার এই সহপাঠীকে তার অসুস্থতার কারণ সন্দেহজনক বলে জানান।

তিনি বলেন, তাদের টিউবওয়েলে হয়ত কেউ কিছু দিয়েছে এবং বাসার সবাই এই পানি খেয়ে ঘুমাচ্ছে।

রাজুর রুমমেট শরীয়তুল্লাহ জানান, শনিবার বিকেলে রাজু খাওয়া দাওয়ার পর তিনি গায়ে হাত দিয়ে দেখেন রাজুর শরীর অনেক গরম। তখন কারণ জানতে চাইলে রাজু তাকে তাদের বাসায় এক আশ্চর্য্যজনক ঘটনা ঘটেছে এবং সবাই টানা ঘুমাচ্ছে বলে জানান।

শরীয়তুল্লাহর ভাষ্যমতে, পরবর্তীতে রাজু খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরে। তারপর হটাৎ খিচুনি উঠার মত হয় এবং তিনি গিয়ে রাজুকে নাড়াচাড়া করে কোনো সাড়া না পেয়ে তার আরেক রুমমেট আরাফাতকে জানান। তারপর তারা রাজুর অন্য বন্ধুদের জানিয়ে তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।

রাজুর সহপাঠী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে ঢালা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলা হয়। আমরা দেরি না করে এম্বুলেন্সে করে রাজুকে ঢাকা মেডিকেল নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে পোস্ট মর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। তবে এখনও পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যায় নি।

এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা দায়ের করেনি রাজুর পরিবার। আর্থিক সমস্যার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। তবে এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা।

রাজুর বাবা আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। টাকা পয়সা না থাকলে মামলা চালাবো কিভাবে। তাই প্রথমে মামলা করতে চাইনি। এখন গ্রামের সবাই মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুষ্ঠু বিচারের জন্য রাজুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সবার সহযোগিতা চাই।’

এ ব্যাপারে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, এই ঘটনায় ময়নাতদন্ত হয়েছে৷ আমরা লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। সংশ্লিষ্ট থানাকেও অবহিত করা হয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়ারি থানায় যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

যোগাযোগ করলে ওয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, ‘ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে, তবে এখনও আমরা রিপোর্ট হাতে পাইনি। ঘটনার পর পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। স্থানীয় থানার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তারা মামলা দায়ের করতে চায়নি। এখন তারা চাইলেও মামলা করতে পারবেনা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিশই মামলা দায়ের করবে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’

সাকিবুল ইসলাম/

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. ক্যাম্পাস
  3. জবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা বলছে পরিবার

জবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা বলছে পরিবার

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টে অজ্ঞানরত অবস্থায় রাজু মারা গেলেও ঘটনার চার দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান রাজুর বাবা।

রাজুর পরিবার ও তার বন্ধুরা জানান, গ্রামের বাড়ী পঞ্চগড় থেকে শনিবার ঢাকায় ফিরে পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি মেসে হটাৎ খিচুনি দিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। পরবর্তী অবস্থা খারাপ দেখে রাজুর সহপাঠী ও মেসের অন্যান্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রাজুর পরিবারের দাবি, তাদের বাসার টিউবওয়েলের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘুমের ওষুধ বা এমন জাতীয় কোনো রাসায়নিক মিশিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে বিষক্রিয়ায় রাজুর মৃত্যু হয়েছে। একই টিউবওয়েলের পানি পান করে রাজুর পরিবারের বাকি সদস্যরাও বমি করে ও দুইদিন অতিরিক্ত ঘুমে মগ্ন ছিলেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

রাজুর বাবা কৃষক আকতারুল ইসলাম বলেন, ঘটনার আগেরদিন শুক্রবার সকাল ১০টার সময় রাজু, রাজুর মা এবং বোন একসাথে খাবার খান। খাবার খাওয়ার পর রাজুর মা ও বোনের বমি হয়। আমি সকালের নাস্তা ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে মাঠে বীজ বুনতে যাই। এরপর বাসায় ফিরে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে শরীর খারাপ অনুভব করি। পরে বাসায় ফিরে দেখি রাজু, রাজুর মা ও আমার ছোট মেয়ে ঘুমাচ্ছে। মাঠে কাজ থাকায় শরীর খারাপ লাগলেও আমি কাজে চলে যাই। এরপর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে দেখি, ওরা সবাই তখনও ঘুমাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় বোন (রাজুর ফুফু) ওদেরকে ডাকাডাকি করলেও কোন সাড়াশব্দ দেয়নি। রাত সাড়ে ৯ টায় রাজুর ঢাকায় যাওয়ার ট্রেন থাকায় রাত ৮ টার দিকে তাকে টেনে তুলে তার ফুফু। ততক্ষণে শরীর খারাপ থাকায় আমিও ঘুমিয়ে যাই রাজু’র ফুপু, ওকে তুলে দিয়ে, জামা কাপড় গুছিয়ে দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় রান্না করা খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে রাজু বাসার পাশের এক ভ্যান গাড়ি চালকের ভ্যান গাড়িতে তুলে দেয়। তিনি রাজুকে স্টেশনে পৌঁছে দেন। সেখানে রাজুর ক্লাসমেট একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়ার সাথে তার দেখা হয়।

রাজুর বাবার ভাষ্যমতে, ভ্যানচালক সাদিয়াকে রাজুকে একটু দেখে রাখতে এবং তার বাসায় সবাই যে অসুস্থ সে বিষয়টিও জানান। পরবর্তীতে ঢাকার ট্রেনে উঠার আগেই রাজু তার এই সহপাঠীকে তার অসুস্থতার কারণ সন্দেহজনক বলে জানান।

তিনি বলেন, তাদের টিউবওয়েলে হয়ত কেউ কিছু দিয়েছে এবং বাসার সবাই এই পানি খেয়ে ঘুমাচ্ছে।

রাজুর রুমমেট শরীয়তুল্লাহ জানান, শনিবার বিকেলে রাজু খাওয়া দাওয়ার পর তিনি গায়ে হাত দিয়ে দেখেন রাজুর শরীর অনেক গরম। তখন কারণ জানতে চাইলে রাজু তাকে তাদের বাসায় এক আশ্চর্য্যজনক ঘটনা ঘটেছে এবং সবাই টানা ঘুমাচ্ছে বলে জানান।

শরীয়তুল্লাহর ভাষ্যমতে, পরবর্তীতে রাজু খেলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরে। তারপর হটাৎ খিচুনি উঠার মত হয় এবং তিনি গিয়ে রাজুকে নাড়াচাড়া করে কোনো সাড়া না পেয়ে তার আরেক রুমমেট আরাফাতকে জানান। তারপর তারা রাজুর অন্য বন্ধুদের জানিয়ে তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান।

রাজুর সহপাঠী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে ঢালা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলা হয়। আমরা দেরি না করে এম্বুলেন্সে করে রাজুকে ঢাকা মেডিকেল নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে পোস্ট মর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। তবে এখনও পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট পাওয়া যায় নি।

এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা দায়ের করেনি রাজুর পরিবার। আর্থিক সমস্যার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। তবে এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা।

রাজুর বাবা আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। টাকা পয়সা না থাকলে মামলা চালাবো কিভাবে। তাই প্রথমে মামলা করতে চাইনি। এখন গ্রামের সবাই মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুষ্ঠু বিচারের জন্য রাজুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সবার সহযোগিতা চাই।’

এ ব্যাপারে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, এই ঘটনায় ময়নাতদন্ত হয়েছে৷ আমরা লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। সংশ্লিষ্ট থানাকেও অবহিত করা হয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়ারি থানায় যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

যোগাযোগ করলে ওয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, ‘ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে, তবে এখনও আমরা রিপোর্ট হাতে পাইনি। ঘটনার পর পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। স্থানীয় থানার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তারা মামলা দায়ের করতে চায়নি। এখন তারা চাইলেও মামলা করতে পারবেনা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিশই মামলা দায়ের করবে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’

সাকিবুল ইসলাম/

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন