The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

জবি শিক্ষার্থীকে মারধরের সময় ছাত্রলীগ- ‘জানোসই তো শিবির মারলে সব মাফ’

জবি প্রতিনিধি: ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীকে মেরে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারধর ও ছিনতাই শেষে হুমকি দিয়ে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই যদি এই বিষয়গুলো কারো সাথে শেয়ার করোস তাহলে তোরে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ক্যাম্পাসের মেইন গেইটে ঝুলায় রাখব।’

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম ইব্রাহিম জনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন, দর্শন বিভাগের (২০১৬-২০১৭) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও অর্থনীতি বিভাগের (২০১৯-২০২০) শিক্ষাবর্ষের ইকবাল মাহমুদ রানা। রানা অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তারা দুজনই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ১৮ তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষে রসায়ন বিভাগের সাজসজ্জার কাজ শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের ইকবাল মাহমুদ রানা এবং দর্শন বিভাগের ১২তম আবর্তনের মোহাম্মদ মেহেদি আমার (ইব্রাহিম) পথ রোধ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, আমি কেন সৌরভ ভাইয়ের পোস্ট শেয়ার করেছিলাম? (সৌরভ দাস রসায়ন বিভাগ ১৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। তাকে গত ৩১ জুলাই, ২০২৩ দফায় দফায় হামলা করে মারাত্মক আহত করা হয়।) তারা আরও বলেন, “তুই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পোস্ট শেয়ার দিছস কেনো?”

অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়, “তোদের ব্যাচের সব পোলাপান তো পোস্ট শেয়ার দেয় নাই। শুধু তুই শেয়ার দিছস। কেন দিছোস? কারণ নিশ্চয়ই তুই শিবির করস।” এমন নানা ধরনের প্রশ্নের পর তারা আমার (ইব্রাহিমের) মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে চেক করে। মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে আমাকে (ইব্রাহিম) বার বার মেরে ফেলার ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তারা আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিয়ে মারধর করে। এরপর তারা আমার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।

টাকা আদায়ের ব্যাপারে অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, “তুই (ইব্রাহিম) যদি এখন টাকা না দেছ তবে আকতার (জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাইরে দিয়ে তোরে জেলে ঢুকায় দিব। আর এখন শিবির ট্যাগ নিয়ে একবার জেলে ঢুকলে নির্বাচনের আগে আর বের হতে পারবি না সেটা তুই ভালো করেই জানস।” পরবর্তীতে মারধর করে বাবা-মা ও টিউশনগুলোর গার্জিয়ানদের বাসায় ফোন দিয়ে ১৩ হাজার টাকা নেন বিকাশে।

অভিযোগে আরও বলা আছে, “আমাদের (ছাত্রলীগের নেতাকর্মী) ছাত্রত্ব নিয়ে কোন সমস্যা নাই। ৭দিনের বেশি বহিষ্কার করে রাখতে পারবে না।” পরবর্তীতে তারা আমাকে (ইব্রাহিম) আবারও মারধর করে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে এবং আমাকে (ইব্রাহিম) বাধ্য করেন স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে যে, আমি আগে শিবির করতাম আর এখন থেকে ছাত্রলীগ করব। পরিশেষে তারা বলে যে, “তুই তো এডা শেয়ার করবি সবার সাথে। তাই আমরা প্রমাণ রাখলাম যে তুই শিবির। জানোসই তো, শিবির মারলে সব মাফ।”

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস. এম আকতার হোসাইন বলে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছে, প্রক্টর স্যারের কাছে দুই দিক থেকেই অভিযোগ গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কোন অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে। তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.