The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪

জবিতে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখেই চলছে পরীক্ষা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

সাকিবুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি: ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখেই বিএনপি-জামাতের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিছু বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতে করা হলেও অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকায় দূর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে নিরাপত্তা শঙ্কায় ক্লাস-পরীক্ষা পিছিয়ে নেওয়ারও দাবি তুলেছেন।

জানা যায়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালেও বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির দূরপাল্লার পরিবহন সেবা। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে দূরপাল্লার কিছু বাস বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। অবরোধের প্রথম দিনে দুইটি বাস হামলা ও ভাংচুরের শিকার হলে তা একেবারেই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে আগামীকাল রবিবার থেকেও দুই দিনের অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এমন অবস্থাগ বাস বন্ধ রাখা হলেও চালু রয়েছে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কয়েকটি বিভাগ অবরোধে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করলেও অনেক বিভাগই তা মানছেনা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে অবরোধ চলাকালে বাসে ভাংচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় রয়েছেন নিরাপত্তা শঙ্কাতেও।

বাসে নিয়মিত চলাচলকারী রায়হান নামের শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ক্লাস-মিড পরীক্ষা চলছে। কিন্তু আমাদের রোডের বাস বন্ধ। বাস বন্ধ থাকায় এই অবরোধের মধ্যে ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি। সেজন্য মিড পরীক্ষা দিতে পারিনি। বাস বন্ধ রাখলে ক্লাস-পরীক্ষা খোলা রাখার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আমএয়া যারা বাসে যাতায়াত করি তারা কি করবো? অবরোধের মধ্যে বাইরে বের হলেও ভয়ে থাকি। এই বুঝি হামলা হলো! এর একটা সমাধান চাই প্রশাসনের কাছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, অবরোধের প্রথম দিনে গাড়িতে আগুন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দুইটা বাসেও হামলা হয়েছিল। সেজন্য ট্রেজারার স্যার, প্রক্টরের সাথে আলোচনা করে দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ এটা অনেক রিস্কি হয়ে যায়। গত মঙ্গলবার দূরপাল্লার বাস চলেছেও, কিন্তু স্টুডেন্ট আসে মাত্র ৪-৫ জন করে। তাহলে চালানোর চাইতে না চালানোটাই তো নিরাপদ। তবে ঢাকার মধ্যের বাসগুলো চলছে।

এদিকে চলমান হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তার কারণে কিছু বিভাগ ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করলেও এর একটা সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন। ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন সিনিয়র শিক্ষকদের একটি অংশ। তারা বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করছি। কারণ যেভাবে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে, ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে সেখানে শিক্ষার্থীদের বিপদের মধ্যে ফেলতে পারিনা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শনিবারে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করলে কিছুটা সুবিধা হবে। চলমান পরীক্ষাগুলো শিক্ষার্থীরা দিতে পারবে। এতে তারা মানসিক অশান্তি থেকেও রক্ষা পাবে। শনিবারে অন্ততপক্ষে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে শিক্ষার্থীরাও। ভবিষ্যতের শঙ্কার কথা ভেবে শনিবারে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এবিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আছমা বিনতে ইকবাল বলেন, আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করেছি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তা করছে। দূরপাল্লার বাসও চলছেনা নিরাপত্তার জন্য। বাচ্চাদের বিপদের মধ্যে তো ফেলতে পারিনা। কিন্তু তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শনিবার তো সাধারণত অবরোধ দিচ্ছেনা। এই সময়ে প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত কম হবে। আমরা শিক্ষকরা আন্তরিক আছি। বাকিটা প্রশাসন দেখলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকটি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, শুক্র-শনিবারে অবরোধ না থাকলে ক্লাস-পরীক্ষা চালানো যেতে পারে। এখন অধিকাংশ বিভাগেই সেমিস্টার ফাইনাল। অন্ততঃ পরীক্ষাগুলো নেয়া গেলেও শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে। অবরোধের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলার পক্ষে কোনো শিক্ষকই না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রশাসন এটি ভেবে দেখতে পারে।

অবরোধ চলাকালে ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকার বিষয়ে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, পরীক্ষার বিষয়গুলো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। বিভাগের যে কমিটি আছে, তারা সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি যতোটা দেখেছি এর আগেও অবরোধ বা হরতালের সময় সাধারণত বিভাগগুলো সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়না। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার একটা বিষয় এখানে আছে। শিক্ষকরা কখনোই চাইবেনা শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ুক।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা তো শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই সিদ্ধান্ত নেই। পরীক্ষার বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট সিদ্ধান্ত নিবে। শিক্ষার্থীরা চাইলে শনিবারে পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাধা নেই। আমরা সহযোগিতা করবো।

এবিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.