জবি সংবাদদাতা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালানোর পর গত ১১ আগষ্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী ভিসি সাদেকা হালিম পদত্যাগ করেন। তারপর দীর্ঘ একমাস গুরুত্বপূর্ণ কাজসহ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী। ১৯ সেপ্টেম্বর ড. রেজাউল করিমকে ভিসি নিয়োগ দেয়ার পর ২২ সেপ্টেম্বর ট্রেজারার ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের গুরুত্বপূর্ণ এই পদ খালি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণে অর্থ সংশ্লিষ্ট সকল কাজের অনুমোদন, দেখভাল করেন ট্রেজারার। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। ট্রেজারার পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবী, আমরা দীর্ঘ একমাস আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে ভিসি পেয়েছি। ট্রেজারার পদেও যোগ্য, দক্ষ, সৎ, জবাবদিহি, স্বচ্ছ এমন কাউকে চাই। যেহেতু এটি সম্পূর্ণ অর্থ ও হিসাব দফতরের সাথে সম্পৃক্ত তাই আমরা চাইব এ পদে যেন বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির কোন সৎ,যোগ্য শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়। আমরা পূর্বে দেখেছি অন্য ফ্যাকাল্টির কোন শিক্ষককে ট্রেজারার নিয়োগ দিলে পূর্বে অভিজ্ঞতা না থাকায় সে দফতরের দূর্নীতি, আয়-ব্যয়, অডিটের ফাঁকফোকর ধরতে পারেনি।
ট্রেজারারের এ পদে আলোচনায় রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির তিনজন শিক্ষক। তারা হলেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. শেখ রফিকুল ইসলাম , ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া, ও ড. ইমরানুল হক।
ট্রেজারার পদের জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা প্রফেসর ড. ইমরানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০২১ সালে প্রফেসর পদে পদোন্নতি হয়। ২০২০ সালে ডেনমার্কের অ্যালবর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানাজমেন্টের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ডের মেম্বারশিপ লাভ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ ও বিবিএ ভর্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং মার্কেটিং বিভাগের এমবিএ(প্রফেশনাল কোর্স) ডিরেক্টর ছিলেন। শুধু তাই নয় প্রফেসর ইমরানুল হক বিদেশি বিভিন্ন প্রজেক্টে সিনিয়র রিচার্চ ফেলো ও পিএইচডি ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও দেশি ও আন্তর্জাতিক বিখ্যাত জার্নাল তার নামে ৩৬ টি জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রেজারার পদে আলোচনায় রয়েছেন প্রফেসর ড.মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া ২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ লেকচারার পদে যোগদান করেন। তারপর ২০০৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্স বিভাগে এসোসিয়েট প্রফেসর হিসাবে যোগ দান করেন। এরপর ২০০৭-২০১০সাল ও ২০১৯-২০২২ সাল পর্যন্ত ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩-২০১৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মাউথার্ন কুইন্সল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছে এবং ২০১৭ ইউনিভার্সিটি অব সাউথার্ন কুইন্সল্যান্ডে পিএইচডি ও ২০১৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেড ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপানে ই বিজনেস ম্যানাজমেন্টে মাস্টার্স করেন। দেশি বিদেশি কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালেও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৭ সালে ফিন্যান্স বিভাগে প্রফেসর পদে পদোন্নতি হয়। তিনি বর্তমানে বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সদস্য। একই সাথে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স কমিটির সদস্য।
ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্য আলোচনায় আছেন ড. শেখ রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমকম ও বিকম পাস করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর বিভাগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এমবিএ(প্রফেশনাল কোর্স) ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ উত্তর মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি এবং অস্ট্রেলিয়ার সাউথয়ার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তার ২৫ বছর শিক্ষকতার জীবনে দেশি বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালেও তার লেখা প্রকাশিত হয়।