দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি পূর্ব সুবিধা রয়েছে। যা হলো, বাসার মালিক এখনও ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় নি। কারণ জানুয়ারি মাস আসতে প্রায় দুই মাস বাকি। তখন হয়তো নিশ্চয়ই নতুন করে বাসা ভাড়ার হিসেব কষতে হবে। আবাসন সংকট এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশন করে তাদের পড়াশোনা খরচ ও নিজেদের খরচ চালিয়ে থাকে৷ কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের নাকাল অবস্থায় সবকিছু চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। টিউশনের বেতন সেই আগের মতই। তবে, দাম বেড়েছে সকল জিনিসের। এমতাবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে এই বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের।
যদিও মেয়েদের জন্য হল রয়েছে, সংখ্যায় যদিএ একটি এবং হলটিতে ওঠার সৌভাগ্য হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম আবর্তনের কোন শিক্ষার্থীর।
হ্যাঁ, এটাই সত্য। শত সমস্যা ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে টিকে থাকতে হচ্ছে জবিয়ানদের। আমাদের কথা শোনার মতো কেউ নেই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে একটি কনসার্টের জন্যও আন্দোলন করতে হয়।আমাদের জন্য নেই কোন আবাসন ব্যবস্থা, পাচ্ছি না কোন অতিরিক্ত সুবিধাও। ক্লাস করতে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতে হয়, কারণ আছে আমাদের জায়গার স্বল্পতা।যখন ফোনে বাবা – মা’য়ের সাথে কথা বলি তখন কেমন আছো বাবা / মা? প্রতুত্তরে – ভালো আছি ছাড়া কিছুই বলার থাকে না।
হ্যাঁ, এসবের কারণ একটাই কারণ আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ি তাও আবার, বাংলাদেশের । এমনই দেশ গড়ার স্বপ্ন কি আদৌ দেখেছিলেন আমাদেন জাতির পিতা, যার জন্য অর্ধেক জীবনের বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন তিনি ? মোটেই নয়, এমন স্বপ্ন দেখেন নি আমাদের রাষ্ট্রের মহানায়ক।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের ২০০ একর ভূমির অধিগ্রহণ দেয় -ভূমি মন্ত্রানালয়। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে। অথচ এ প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজও এখনও, তবে হবে একদিন হবে, কবে হবে? সেটাই বলছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অথচ, শিক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির কল্যাণে বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান ছিল গর্ব করার মত। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২ তে সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ৬৬ এর ছয়দফা দাবি, ৬৮ এর এগারো দফা দাবি, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।
বর্তমানে মোট ৬টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউট রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী, ৯৬০ জন একাডেমিক স্টাফ এবং ৮৫০ জন প্রশাসনিক স্টাফ নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। হয়তো ওই যে শুনেছি একদিন নতুন ক্যাম্পাস হবে, সে শোনা রূপকথার গল্পের মতোই অবান্তরই থেকে যাবে। যার জন্য আমাদেরকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আন্দোলন ছাড়া নাকি বাংলাদেশে কিছু পাওয়া যায় না।
তাই তো মনে পড়ে সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত সেই কবিতার (দুর্মর) একটি পঙক্তি :
সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়ঃ
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
সর্বশেষ বলা যায়, আবাসন সংকট ও সংকীর্ণ ক্যাম্পাসের ঘানি মাথায় নিয়েই অবিরাম ছুটে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। চরম মানবেতর জীবনযাপন করেও দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এহেন সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণ পেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা এখন সময়ের দাবী।