প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বর্তমান সরকারের অনেক ডিজিটাল উদ্যোগের নেপথ্যের মূল কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। তবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তার (সজীব ওয়াজেদ জয়) এবং দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াই উত্তম।
রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইএর সম্পাদক স্মীতা প্রকাশ দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেখুন… সে এখন বড় হয়ে গেছে। তাই এটা এখন তার বিষয়, কিন্তু সে দেশের জন্য কাজ করছে। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, এই সমস্ত স্যাটেলাইট বা সাবমেরিন ক্যাবল বা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, এসব ডিজিটাল সিস্টেমের ধারণা তার এবং আপনি জানেন… সে আমাকে সহায়তা করছে এবং সে এটা করছে। কিন্তু সে কখনই মন্ত্রণালয় অথবা দলে কোনও পদ-পদবি নেওয়ার কথা ভাবেনি। না, সে ভাবেনি।’
তবে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দলের একটি পদে জায়গা দেওয়ার জন্য একবার কর্মীদের মাঝ থেকে প্রচণ্ড দাবি উঠেছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এমনকি আমাদের দলীয় সম্মেলনেও তাকে পদ দেওয়ার জন্য ব্যাপক দাবি উঠেছিল। পরে আমি তাকে মাইক্রোফোনের কাছে গিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানাতে বললাম। আমি তাকে বললাম, তুমি কী করতে চাও তা লোকজনকে জানাও। সে আমার কথা শুনে মাইক্রোফোন নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘না, আমি এই মুহূর্তে দলে কোনও পদ চাই না। বরং যারা এখানে কাজ করছেন তাদের এই পদ পাওয়া উচিত। কেন আমি একটি পদ দখল করবো? আমি আমার মায়ের সাথে আছি, আমি দেশের জন্য কাজ করছি এবং আমি তাকে সহায়তা করছি, আর আমি এই কাজই করবো।’
ছেলের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সে এভাবেই চিন্তা করে। তাই আমাকে তাকে তৈরি করতে হবে অথবা আমাকে করতে হবে, বিষয়টি এরকম নয়।
তবে ছেলেকে রাজনীতিতে যোগদানে ডাক দেওয়ার বিষয়ে কিছু ভাবছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নির্ভর করে আপনি দেশের যে জনগণকে দেখছেন তাদের ওপর।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই সন্তান রয়েছে। দু’জনের মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বড় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ছোট। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বংশীয় রাজনীতি কোনো ইস্যু নয়।’ এএনআইয়ের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথাও স্মরণ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি একেবারে পরিষ্কার। সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে এই কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন। এবং আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করি। আমার প্রধান কথা হলো দেশের জনগণের দিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। কীভাবে তাদের একটি উন্নত জীবন দিতে পারি? কীভাবে তাদের জীবন উন্নত করতে পারি? এবং আমি সবসময় বলছি, আমাদের একমাত্র শত্রু আছে। সেটা হলো দারিদ্র্য। তাই চলুন একসাথে কাজ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সবসময় মনে করেন, বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলোর উচিত সর্বদা সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ ও মতভেদ দূর করা। আমি সবসময় ভাবি, হ্যাঁ, যদি চীন ও ভারতের মধ্যে কোনও সমস্যা থাকে তাহলে আমি তাতে নাক গলাতে চাই না। আমি আমার দেশের উন্নয়ন চাই এবং যেহেতু ভারত আমাদের পাশের প্রতিবেশী, তাই তাদের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অনেক দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আছে, এটা সত্য। কিন্তু আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করেছি… আপনি সেটা জানেন।