ঈদের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পুরোদমে খুলেছে গতকাল বুধবার। ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষায় অংশ নেন মাত্র ৮ জন। বাকি এক হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। তবে এ পরীক্ষায় অংশ নেননি কেউ। ২২তম ব্যাচে বর্তমানে সক্রিয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৩০৫ জন। তাদের মধ্যে একজনও পরীক্ষার হলে উপস্থিত হননি। অর্থাৎ, শতভাগ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষা বর্জন করেছেন। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টা। নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষার কক্ষগুলোতে যান পরীক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্য থাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরীক্ষার কক্ষ থেকে তারা বেরিয়ে যান।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ প্রথমবারের মতো টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এর আগে ১৮ ও ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন। পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধসহ ছয় দাবিতে অটল রয়েছেন তারা।
রাজনীতি বন্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বুয়েট: ২৭ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট। পরে ছাত্রলীগের একজন নেতার করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে জানান হাইকোর্ট। আদালতের আদেশের পর ছাত্রলীগ বুয়েটে কমিটি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে নিজেদের অবস্থানে অটল। একই অভিমত ও দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরাও।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বুয়েটে রাজনীতি বন্ধ রাখতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এখন পর্যন্ত তারা হাতে পাননি। হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট।
অধ্যাপক আব্দুল জব্বার খানের ভাষ্য, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোর্টের কোনো অর্ডার পাইনি। যতটুক জানতে পেরেছি, ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কোর্ট বন্ধ রয়েছে। হয়তো এরপর অর্ডারটি হাতে পেতে পারি। হাইকোর্টের আদেশটি হাতে পেলে আমরা দেখবো, সেখানে কী বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল, সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করা হয়েছে নাকি বলা হয়েছে যে স্থগিত করা হলো অথবা কেন বাতিল করা হলো কিংবা কেন স্থগিত করা হবে না? নিশ্চয়ই হাইকোর্ট আমাদের কারণ দর্শাবেন। যদি কারণ দর্শানো হয়, তখন কনটেন্ট-মেরিট দেখে আমাদের উত্তর দিতে হবে। এ উত্তর না দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ।’
বুয়েটের এ উপ-উপাচার্য বলেন, ‘বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে, বুয়েট কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকতে চাইছে। এটি আসলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আইনি প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিতেই আমাদের অবশ্যই রেসপন্স করতে হবে। আইনি যে প্রক্রিয়া রয়েছে, এটি শেষ অবধি আমরা কনটেস্ট করবো। আপিল বিভাগে যাবো, আপিল করবো। সেখানে আমরা একা নই, আমাদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইরা থাকবেন।’
২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
তবে গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। এতে ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চান না বলে সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তাদের সঙ্গে একমত বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও।