এবারের ঈদুল আজহায় ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকার ‘ছাগল কেনা’ ইস্যুতে তোপের মুখে পড়েন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর অফিসে আসেননি। তার বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান ‘ছাগলকাণ্ডের’ ঘটনায় এর মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গতকাল রোববার বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
এর আগে গতকাল রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। গতকাল দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ গত ৪ জুন কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সব হারানোর পেছনে রয়েছে ‘ছাগলকাণ্ড’। ছেলে ইফাতের ছাগল কেনার বিষয়টি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তারপর সারাদেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে ‘ছাগলকাণ্ড’। শুধু তাই নয়, বেরিয়ে আসে এই কর্মকর্তা ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদের চিত্র।
জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অল্প সময়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় তিনি আতঙ্কে ছিলেন। কারণ তার চেহারা সবার পরিচিত। তবে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পরামর্শে তিনি মাথার চুল ফেলে টাক হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। মূলত সবার কাছ থেকে চেহারা আড়াল করতে এই কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি।
এর আগে ধানমণ্ডি, কাকরাইল, গুলশানসহ মতিউরের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ঠিকানায় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর তাকে অফিস করতেও দেখা যায়নি। মূলত এরপর থেকেই দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘মতিউর এখন কোথায়?’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ছাগলকাণ্ডের পর ছেলেকে অস্বীকার করে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন তিনি। মুঠোফোনে যোগাযোগও ছিল সীমিত। সেই সময়ে অস্বীকার করা ছেলেকে নিরাপদে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।