The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

চারকোনা বাক্সে শিশুদের শিক্ষা

২০১৯ সালের ডিসেম্বর। ভারতের চিনু জেবারাজের তিন বছরের মেয়েটি আনন্দে বেশ উচ্ছল হয়ে উঠেছিল। কারণ আর কয়েক মাস পরেই সে স্কুলে যাবে। তবে বিধি বাম। যে সময়ে তার ক্লাস শুরু হওয়ার কথা, ওই সময় করোনার সংক্রমণের কারণে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে বসে আছে সরকার।

কয়েক মাস পর লকডাউন প্রত্যাহার হলেও স্কুল খোলেনি। গত দুই বছরে বেশ কয়েকটি রাজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিলেও করোনার সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের কারণে তাদের পিছিয়ে আসতে হয়েছে।

জেবারাজের মেয়ের বয়স এখন পাঁচ বছর। গত ৬০০ দিন সে জুম অ্যাপের মাধ্যমে স্কুলের পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। ভারতে স্কুল বন্ধের প্রভাব পড়েছে জেবার মতো প্রাক-প্রাথমিকের চার কোটি ২০ লাখ শিশুর ওপর।

জেবারাজ বলেন, ‘স্কুলে সে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে আমি সেই অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তার ক্লাসের সব বন্ধুরা এখন রয়ে গেছে জুমের ছোট বর্গগুলোতে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্কুল থেকে যে কয়টি বছর শিশুরা দূরে কাটিয়েছে সেটি তাদের শেখার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. চন্দ্রকান্ত লাহারিয়া বলেন, ‘প্রথম শ্রেণিতে পড়া কোনো শিশু যদি শেখার সময় হাতছাড়া করে, তাহলে পরবর্তী কয়েকটি শ্রেণিতে এর প্রভাব পড়বে।’

তিনি জানান, শিশুর বয়স যত কম হবে, দীর্ঘ মেয়াদে শেখার ক্ষতি তত বেশি হবে। বিশেষ করে ল্যাপটপ ও অব্যাহত ইন্টারনেট সেবা না পাওয়া লাখ লাখ শিশুর ওপর এই প্রভাবের মাত্রা অনেক বেশি।

গত বছরের আগস্টে অর্থনীতিবিদদের পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে দরিদ্র শিশুদের ওপর ‘বিপর্যয়কর প্রভাব পড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের প্রায় অর্ধেকই কয়েকটি শব্দের বেশি পড়তে অক্ষম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার স্বীকার করেছে, শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যা আছে। কিন্তু দেশটির পার্লামেন্টে পেশ করা নতুন বাজেটে এই সমস্যা সমাধানে সরকার যে ব্যবস্থা নিয়ে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্রামের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরা স্কুল বন্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি জানিয়েছেন, সরকারি শিক্ষামূলক টিভি চ্যানেলের লাইন-আপ ২০০ তে বাড়ানোর মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় সম্পূরক শিক্ষা দেওয়া হবে।

তবে যেসব অঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই কিংবা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নেই সেসব এলাকার শিশুরা কীভাবে টেলিভিশন দেখবে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।

সংকট অন্যদিকেও রয়েছে। বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের বেলায় অনলাইন পড়াশোনার বিষয়টি এখন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুম ক্লাস চলাকালে এদের জন্য মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। পড়া চলাকালে এদের অনেকে এখন শুধু ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তামিলনাড়ু রাজ্যের কোডাইকানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিশু পরামর্শখ রুথ মেরি বলেন, ‘অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের ক্যামেরা চালু করা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি পুরো অনলাইন শেখার প্রক্রিয়ার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটি লক্ষণ।’

আরেক শিশু পরামর্শক মারিজা সিতার জানান, পাঁচ বছর বা এর বেশি বয়সের শিশুদের জন্য শেখার সবচেয়ে সেরা পদ্ধতি হচ্ছে অন্য শিশুদের সঙ্গে শেখা।

তিনি বলেন, ‘তারা সামাজিক দক্ষতা শেখে এবং খেলার সময় বিষয়গুলো কিভাবে সামাল দিতে হয় তাও শেখে। বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থেকে বাড়িতে বসে তারা এটি শিখতে পারে না।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.