The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪

চাটুকারিতার অভ্যাস ভাংতে সরল সত্য বয়ান

অরণ্য ফরিদঃ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অনেকে মাঠে কাজ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন, অনেকে সামাজিক মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, অনেকে আন্ডার গ্রাউন্ডে মাস্টার স্ট্রোক খেলেছেন। তাদের সবার চেষ্টার প্রতিফলন একটি নতুন স্বাধীনতা, একটি নতুন বাংলাদেশ।

নাম জানা এবং নাম না জানা অগণিত মানুষের চেষ্টা ও আত্মত্যাগকে সন্মান করে এই নতুন বাংলাদেশ।১৯৭১ সালেও স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, ইতিহাস যাদের নামটুকুও জানেনা। মুক্তিযুদ্ধ কেউ ভাতা পাওয়ার জন্য বা কোটা পাওয়ার জন্য করেনি।

আজ যারা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং জীবন দিয়েছে তারাও প্রাপ্তির জন্য কিছু করেনি। সবার মাঝে চেতনা ছিল স্বৈরাচারকে উৎখাত করে বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়া।

সেনাবাহিনীকে নিয়ে বেশী কথা বলা যায়না, তবুও কিছু সরল সত্য কথা জনগনের জানার হক আছে। ভাল ব্যাটসম্যানও সব বল ভালো খেলে না। খুনী স্বৈরাচার তার কয়েকজন বিশ্বস্ত খুনীকে দিয়ে অগণিত হত্যা, গুম-খুন করে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করেছে।

আমাদের সেনাপ্রধান আত্মীয়তার পরিচয়কে পেছনে ফেলে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে শেষ মুহূর্তের দমন নিপীড়ন পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। উক্ত ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সেনাপ্রধান তার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছেন দেশের জন্য। তিনি আত্মীয়তাকে নয় জনগণকে বেছে নিয়েছেন, দেশকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সেনাপ্রধানসহ অন্য জেনারেলদের বলিষ্ঠ ভূমিকাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরন না করলে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবো আমরা।

সেনাবাহিনীর ভেতরের খবর সচরাচর বাইরে আসে না। প্রতিটি সেনাসদস্য ও অফিসারই এই মাটির সন্তান ও দেশপ্রেমিক। বাহিনীর হাতেগোনা কিছু অফিসার অপরাধ কর্মে জড়িয়েছিলেন, তারা এখন চিহ্নিত। তাদের কর্মই তাদের কর্মফল নির্ধারণ করে দিবে।

আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি মহান আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা। পরবর্তীতে আবার কেউ স্বৈরাচার হতে চাইলে তার পরিনতিও এমনই হবে তা বলাই বাহুল্য।

একসময় অধৈর্য্য হয়ে মানুষ যেই সেনাবাহিনীকে গালমন্দ করতো আজ সেই সেনাবাহিনী জনগনের নয়নের মনি। সব অর্জনের একটা উপযুক্ত সময় আছে। এক সাগর রক্ত দিয়েই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। আজ আবার অনেক রক্তের দাম দিয়েই দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।

আত্মীয়তার সম্পর্কই যদি সবকিছু হতো তাহলে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নিয়ে শুরু হওয়া বিরোধে জনাব মাসুদ উদ্দীন আহমেদ খালেদা জিয়ার বিপক্ষে যেতো না। কথিত ১/১১ থেকে যেমন অনেক খারাপ অর্জন ছিল তেমন ভালও ছিল। ১/১১ এর প্রশংসা করছি না কিন্তু যা ঘটেছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

এই বিপ্লব জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। খোদ সেনাপ্রধানই এই বিপ্লবের কি পয়েন্টের নেতৃত্বদাতা। সেনাপ্রধানও মুক্তি পেয়েছেন তার উপরে হওয়া বৈষম্য থেকে। সেনাবাহিনী প্রধান হয়েও তার মাথার উপরে চেপে ছিল এক সিরিয়াল অপরাধী, গুম-খুনের দোসর সাবেক জেনারেল তারেক। ৫ আগস্টের বিজয়ে সেনাপ্রধানও মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিয়েছেন।

বর্তমান সব জেনারেলই স্বৈরাচার আমলে প্রমোশন পেয়েছেন তাই বলে সবাই ক্যু করে ফেলছে না। জিয়াউর রহমানও সোয়াত থেকে আর্মস খালাস করতে গিয়েছিল বলা হয়, তাই বলে জিয়াউর রহমান কি কমান্ড ভেঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের সুচনা করেনি? সঠিক সময় মানুষের বিবেককে সঠিক পথে চালিত করে।

আন্দোলনের মাঝপথে রক্তপাত বাড়ছিল। জাতিসংঘের এক্সপার্ট বলেছিলেন অধৈর্য্য হবেননা, আপনাদের বিজয় সামান্য দূরে। শেষ পথটুকু পাড়ি দিতে হবেই।

সন্দেহ করা হিউম্যান নেচার কিন্তু কাউকে অতি সন্দেহ করা এক ধরণের অসুস্থতা। সবকিছুতে সন্দেহ আর ক্যু হওয়ার আশংকা করা জ্ঞানের স্বল্পতা। এটা ভূল বুঝাবুঝির জন্ম দেয়। প্রত্যেকের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। নিজে অতিজ্ঞানী হয়ে গেলে তা দাম্ভিকতার জন্ম দেয়। অহংকারীকে মহান আল্লাহ পছন্দ করে না। মূসা নবী নিজেকে সবচেয়ে জ্ঞানী বলায় মহান আল্লাহ তাকে মোজেজা দিয়ে বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমাদের মাঝে মোজেজা আসবেনা। মহান আল্লাহর পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করলে অনেক কিছুর ধারনা পাওয়া যেতে পারে।

বর্তমানে পদে থাকা একজন জেনারেল গেলে আরেক জেনারেল আসবে। তার প্রমোশনও স্বৈরাচার আমলেই হয়েছে। একটা অফিসারকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্রের অনেক সময় লাগে। বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনী অনেক অফিসার হারিয়েছে। সন্দেহ বাড়ালে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। অফিসারদের মোটিভেট করে সঠিক জায়গায় এনে সঠিক কাজ করাই এখন সাফল্য। যারা গুম-খুন বা বড় অপরাধে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে কিছু সময় লাগবে। দেশ অনেক এলোমেলো হয়ে আছে। গণবিপ্লব মানে ধ্বংসের উন্মাদনা নয়।

বর্তমান সেনাপ্রধান বিচক্ষনতার সাথে এখনো সব ঠিক রেখেছেন এবং কাজ করে চলেছেন। কাকে কোন দায়িত্বে রাখবে এটা অনেক চেষ্টা ও চিন্তার বিষয়। সিভিলিয়ান থেকে এনে আর্মি চালানো যাবে না। শিক্ষা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা একদিনে অর্জন হয়না।

যেই সেনাপ্রধান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাড়িয়েছে তার উপরে আস্থা রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। তিনি দেশের ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাকে কাজ করার সময় দিতে হবে।

সবারই কম বেশী ভূল হয়, সমালোচনাকারীদেরও ভূল হয়। শুধু স্বৈরাচারী হাসিনাই মনে করতো তার কোন ভূল নেই। হাসিনার মতো সব কিছুতেই বিএনপি-জামায়াত খোঁজা আর মিলিটরারীতে সারাদিন ক্যু হওয়ার চিন্তা একই ধরনের বক্তব্য মাত্র। বাস্তবতা এমন নয়। সমালোচনা করা উচিত তবে অধিক সমালোচনা এবং যুক্তিহীন সমালোচনা কাজের স্পৃহাকে কমিয়ে দেয়। কোন জেনারেলই এখন ক্যু করছে না। সেনাপ্রধানের কমান্ড চ্যানেল অটুট আছে।

চরম সময়ে জনগণের আস্থা অর্জন করে দেশ বাঁচানো সেনাপ্রধান ও তার জেনারেলদেরকে দেশ গড়ার কাজে সময় দিতে হবে। এক সপ্তাহ বা এক মাসে ধ্বংসস্তুপ থেকে এই দেশকে বদলে দেয়ার মতো সুপারম্যান কেউ নয়। সেনাপ্রধান ও তার জেনারেলরাও রক্ত মাংশের মানুষ। তাদের সাফল্যের মধ্য দিয়েই এই গণ বিপ্লবের পূর্ণতা আসবে ইনশাআল্লাহ।

লেখকঃ কলামিস্ট ও সমাজ চিন্তক

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.