আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন শুরু হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পৃথক পৃথক আবেদন করতে হবে। প্রতি ইউনিটে আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। গুচ্ছ ভর্তিতে নূন্যতম ৩০ নম্বর প্রাপ্তরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ইউনিটে আবেদন করতে পারবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত উপাচার্যদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদা মেধাতালিকা তৈরি করবে। এই তালিকা কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এরপর কেন্দ্রীয়ভাবে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে।
এদিকে প্রথমে ভর্তিচ্ছুদের সুুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি আবেদনের মাধ্যমে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ভর্তি কমিটি। এতে করে গত শিক্ষাবর্ষের ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। ফলে ভোগান্তি কমলেও আর্থিক ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব এবং আর্থিক সাশ্রয় করা হয়। এবার ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। তবে আর্থিক ক্ষতি ঠিকই হচ্ছে। যাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো না তারা পর্যাপ্ত ভর্তি আবেদন করতে পারবেন না। ফলে অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
তাদের মতে, ভর্তি পরীক্ষায় যারা তুলনামূলক কম নম্বর পেয়েছে তাদের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ইউনিটে আবেদন করতে হবে। ফলে নূন্যতম এক হাজার টাকা করে ধরলে একজন ভর্তিচ্ছুর কেবল আবেদনের পেছনেই খরচ হবে ২২ হাজার টাকা।
সুমন নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী গুচ্ছ ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের খরচের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি ইউনিট প্রতি ৫০০ টাকা করে নেওয়ার কথা থাকলেও কথা রাখছে না কমিটি। এখন তারা ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা করে ফি নির্ধারণ করেছে। ফলে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে ৫ হাজার টাকা খরচ পড়বে। কেউ যদি ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন তাহলে তার খরচ হবে ১১ হাজার টাকা।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, শুধু আবেদনেই শেষ নয়; এরপর রয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। একজন শিক্ষার্থীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে খরচ পড়বে ২০ হাজার টাকার মতো। এরপর অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হতে গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। ফলে সব মিলিয়ে গুচ্ছ ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের খরচ হবে ৪১ হাজার টাকা। যা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
মো. রহিম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রথম কথা হলো আবেদন যদি আলাদাই করতে হয় তাহলে শুরুতে ১৫০০ টাকা করে ফি কেন নেওয়া হলো, আগের বারের মতো ১২০০ নিতো। তার উপর কথা ছিলো ৫০০ টাকায় নিজের ইউনিটে আবেদন করলেই হবে, এখন আবার হিসাব আসলো ৫০০ করে প্রতি ভার্সিটি, এমন হলে ১টা ভার্সিটি কেনো ঠিক করে দিবে। প্রতি জেলায় গিয়ে পরীক্ষা দিলে অনেক খরচ লাগতো কিন্তু এখন এই সিস্টেমে কম লাগতেছে কই, শিক্ষার্থীদের লাভটা হলো কই?
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না কোনো উপাচার্য। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে যোগাযোগের পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রাথমিকভাবে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল সেগুলো টিকতে পারেনি। কেননা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন। তাই একটি আবেদনের মাধ্যমে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ভর্তিচ্ছুদের পৃথক পৃথক ভাবেই আবেদন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আলাদা আলাদা মেধাতালিকা তৈরি করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাবে। এই তালিকা তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক খরচ হবে। সেজন্য আবেদন পৃথক পৃথকভাবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহবায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।