জবি প্রতিনিধি: ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) থাকা না থাকা নিয়ে ফের ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনতে ও মান রক্ষা করতে পর পর দুইটি একাডেমিক কাউন্সিলে নতুন বছরে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সিন্ডিকেট সভা স্থগিতের মধ্য দিয়ে তা পুনরায় শঙ্কার মধ্যে পড়েছে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রথম থেকেই অবস্থান নিয়ে আসছেন। নিজস্ব স্বকীয়তা হারানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সংরক্ষণ, গুচ্ছ পদ্ধতির নানা অসংগতি ও হয়রানি বন্ধ না হওয়া সহ সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘গুচ্ছ ও গুচ্ছের বাইরে’ এই দুই ভাগে বিভক্ত করে স্বায়ত্তশাসন নীতির মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে বলে দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে বের হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ববৃহৎ এ শিক্ষক সংগঠনটি স্মারকলিপি, সংবাদ সম্মেলন সহ সর্বশেষ ৩ এপ্রিল মানববন্ধনও করেছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এর ৪০ ধারা অনুযায়ী, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও অন্যান্য পাঠ্যক্রমে ছাত্রভর্তি একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত ভর্তি কমিটি কর্তৃক প্রণীত বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।’
শিক্ষকদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও ইউজিসির অনুরোধ উপেক্ষা করে ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্যে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে সেই একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছের পক্ষে মত দেয়ায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের। এ নিয়ে তিনি উপাচার্যের নিকট একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন। ঘটনার দুইদিন পর অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভাও অধিকাংশ সদস্যের অনুপস্থিতির অজুহাতে স্থগিত করা হয়েছে। সভার সূচির প্রথমেই ছিলো ভর্তি পরীক্ষা। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গুচ্ছে থাকা না থাকা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লঙ্কাকাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনের মাঝেও যেনো তুলকালাম কাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে ওই শিক্ষকের করা হেনস্তার অভিযোগকে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সভায় ওই শিক্ষককে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। শিক্ষক সমিতির দাবি, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে এজেন্ডা বহির্ভূত বক্তব্য দিতে থাকেন এবং টেবিল চাপড়িয়ে উত্তেজনাকর ও অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় সভায় উপস্থিত সদস্যরা তাকে শান্ত হওয়ার জন্য বলেন এবং এক পর্যায়ে কয়েকজন তার হাত ধরে আসনে বসতে অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে তিনি তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে সভায় উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেই সভায় কোনো ধরনের লাঞ্ছনার বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি।
চলমান নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপকৌশল হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকেরা বিষয়টিকে উদ্বিগ্নতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। যে বিষয়টি উক্ত সভাতেই নিষ্পত্তি ঘটেছে সেটিকে নিয়ে জল ঘোলা করায় জবিশিস মর্মাহত এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে সাতশ সদস্যের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিবার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় ঐক্যবদ্ধ বলে প্রতিবাদ লিপিতে জানানো হয়।
এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম একাডেমিক কাউন্সিলে (বিশেষ) নিজস্ব পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিতে ভর্তি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপাচার্যকে আহ্বায়ক ও রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করে কোষাধ্যক্ষ ও অনুষদের ডিনদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। ইউনিট ভিত্তিক ভর্তি কমিটিতে অনুষদগুলোর ডিনকে আহ্বায়ক ও পরবর্তী ডিন যিনি হবেন তাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিটভুক্ত বিভাগের চেয়ারম্যানরা ইউনিট ভিত্তিক ভর্তি কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় তা চূড়ান্ত করা হবে। ৮ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভা হঠাৎ করেই ডাকা হয়েছিল। ওই দিন সভা হলে অধিকাংশ সিন্ডিকেট সদস্য উপস্থিত থাকতে পারতেন না, তাই সভা পেছানো হয়েছে। সভার তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে।
তিনি আরও জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পরে অধ্যাপক ড. আবদুল কাদের একটা অভিযোগ দিয়েছেন। রেজিস্ট্রারকে সেটির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।