জাবি প্রতিনিধি: সরকারি মাদকাসক্ত ও চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ও পরামর্শক কাজী লুতফুল কবির বলেন, মাদকাসক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশীরভাগই দীর্ঘদিন গাঁজা সেবনের ফলে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। সিগারেটের মাধ্যমে মাদকের সাথে পরিচয়পর্ব ঘটে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মাদকের নেশায় জড়িয়ে আসক্ত হয়ে পড়েন মাদকসেবীরা। প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে ফিরিয়ে আনা গেলেও দীর্ঘদিন মাদক সেবন করা ব্যক্তিদের চিকিৎসা ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্রের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে গড়ে প্রতি সতেরো জনের একজন মাদকে আক্রান্ত। এ সংখ্যা প্রায় কোটির কাছাকাছি। সরকারি হাসপাতালে মাদকাসক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ সুযোগ এবং সহজলভ্যতার কারনে শিক্ষার্থীরা মাদকের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার বলেন, আগে মানুষ নিজেদের মধ্যে আবেগ অনুভূতি আদান-প্রদান করতো। কিন্তু বর্তমানে ইন্ডিভিজুয়ালিজম চর্চা বেড়ে গেছে। যৌথ পরিবারে ভাই-বোনসহ সবার মাঝে আগে যে মিথস্ক্রিয়া হতো, এখন সেটা হচ্ছে না। সবাই আলাদা আলাদা হয়ে থাকছে এবং অনলাইনেই বেশি সময় কাটাচ্ছে। ফলে সবার মধ্যে একাকীত্ব বাড়ছে। মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। হতাশা ভুলতে অনেকেই মাদকের প্রতি ঝুকছে। এছাড়া নানবিধ কারনে মাদক সেবনের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মোঃ মনজুরুল হক বলেন, মাদকসেবীরা মাদককে আনন্দের বিষয়বস্তু মনে করে। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে প্রথমবার মাদক সেবন করে। এরপর আর সেখান থেকে বের হতে পারে না। মাদকের কারনে স্বাস্থ, চিন্তা-চেতনা, ভবিষ্যৎ, পারিবারিক জীবন, ব্যক্তিজীবন সবকিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ জগতে একবার প্রবেশ করলে বের হয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন। মাদক থেকে দূরে থাকার লক্ষ্যে পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা জোরদার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, মাদকের অপব্যবহারের মাধ্যমে তরুণদের বিপথগামী করা হচ্ছে এবং জাতির মেধা-মননকে ধ্বংস করা হচ্ছে। মাদক গভীরভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাই এর থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।