দেশের ১১৬ জন ধর্মীয় বক্তা এবং হাজারখানেক মাদরাসার বিরুদ্ধে তালিকা সম্বলিত গণকমিশনের ‘শ্বেতপত্র’ আমলে নিয়ে তা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করতে কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ২ হাজার ২১৫ পাতার একটি ‘শ্বেতপত্র’ দুদকে দাখিল করে। শ্বেতপত্রটি পরীক্ষা করে সংক্ষিপ্তসার কমিশনে উপস্থাপন করার জন্য দুদক একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করেছে।
মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ১১৬ ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ও মৌলবাদী তৎপরতায় যুক্ত এক হাজার মাদরাসার নামের তালিকার ‘শ্বেতপত্র’ গত ১১ মে দুদক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে জমা দেয় দেশের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত গণকমিশন।
ওইদিন দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার হাতে এই ‘শ্বেতপত্র ও ১০০ সন্দেহভাজন’ ব্যক্তির তালিকা তুলে দেন গণকমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
“বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন” শীর্ষক প্রায় সোয়া দুই হাজার পৃষ্ঠার এ শ্বেতপত্রে সারাদেশে মৌলবাদী তৎপরতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
এরপর গত ২৩ মে গণকমিশনের অর্থের উৎস অনুসন্ধানে দুদকে পাল্টা স্মারকলিপি দেয় ইসলামিক কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শ্বেতপত্রটি পরীক্ষা করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা এ কমিটির দায়িত্ব। আলেমদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অনুসন্ধানের কোনো দায়িত্ব কমিটিকে দেওয়া হয়নি। এমনকি কমিশন থেকে কোনো অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীতও হয়নি। কমিটি একটি সংক্ষিপ্তসার কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে মাত্র।
গঠিত কমিটি শুধুমাত্র শ্বেতপত্রটি পরীক্ষান্তে তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে জানিয়ে দুদক সচিব বলেন, পরবর্তীসময়ে কমিশন বিষয়বস্তু বিশদ পরীক্ষান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তিনি জানান, দুদকে সরাসরি পত্রযোগে, ১০৬ হটলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়। অভিযোগ পরীক্ষান্তে প্রাথমিকভাবে কোনো দুর্নীতির উপাদান বা তথ্য পাওয়া গেলে এবং তা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের সিডিউলভুক্ত হলেই কেবল তা পরবর্তীসময়ে অনুসন্ধানের অনুমোদনের জন্য কমিশনে উপস্থাপন করা হয়। এটিই দুদকে অভিযোগ প্রাপ্তি ও নিষ্পত্তির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
গত ১১ মে ধর্মীয় বক্তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠিত গণকমিশন নামের একটি সংগঠন দুদকে ‘শ্বেতপত্র’ দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের আর্জি জানায়।
এর আগেই একই শ্বেতপত্র তুলে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে। তবে পরবর্তীকালে ‘গণকমিশনের ভিত্তি নেই’ বলে গণমাধ্যমকে জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, গণকমিশনের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।