রাবি প্রতিনিধি: বছর ঘুরে আবারও এসেছে পবিত্র রমজান মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ। ইসলামি স্তম্ভ ৫টি। তার মধ্যে তৃতীয় ও তাৎপর্যবহ হলো সিয়াম সাধনা। আত্মসংযম ও আত্মার পরিশুদ্ধির মাস রমজান। কারণ এই মাসে নফসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করি। সব খারাপ দোষ বাদ দেওয়া ছাড়াও রাগ, হিংসা, গিবত, মিথ্যা, সন্দেহ, বিদ্বেষ, অহংকারসহ যেগুলো আমাদের খারাপ কাজে আকৃষ্ট করে তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।
চলুন এই রমজান মাস নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ‘রমজান অনুভূতি’ জানা যাক।
রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় আর বারবার লোডশেডিং এ ভোগান্তি
আলহামদুলিল্লাহ। রমজান মাস টা আল্লাহর রহমতে ভালোই কাটছে।চারিদিকে যেন অদ্ভুত রকমের শান্তি এবং স্নিগ্ধতা। তবে ভোগ্যপণ্যের দাম রমজান মাস আসলেই বেড়ে যায়।যার কারণে দরিদ্র মানুষের রমজান মাস অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে।জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে রমজান মাস আরও আনন্দময় হতো। আর রমজান মাসে এই ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে রোযা রাখাটা অনেকটা কষ্টকর হয়ে ওঠে।বিশেষ করে,ইফতার, তারাবিহ এবং সেহেরির সময় লোডশেডিং না থাকলে আরো ভালো লাগতো।
মো. বরাত আলী, গণিত বিভাগ ৪র্থ বর্ষ
ক্যাম্পাসের নতুন বন্ধুরা পরিবারের অভাব বুঝতে দেয়নি
পরিবার থেকে সাড়ে চারশত কিলোমিটার দূরে এটা আমার প্রথম রমজান পালন। পরিবার ছাড়া রোজা কল্পনা করা কতটা কষ্টকর তা এখন উপলব্ধি করতে পারছি। প্রতিবার বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে একসঙ্গে ইফতার আর সেহরি করতাম। এবার আর বাবা-মা পাশে নেই। সেহরিতে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠা ; ইফতারিতে মায়ের হাতে বানানো হরেক রকমের খাবার ; শরবত বানানো নিয়ে ছোট বোনের সাথে খুনসুটি খুব মিস করছি। এখন ইফতারের সময় হলে সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।
বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র পাশে থাকলেও মনে হয় পাশে নেই। তবুও সবকিছু মেনে নিয়ে হাসিমুখে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। ইফতার বা সেহরি একসঙ্গে করি। এটাই রমজানের মাহাত্ম্য।পরিবার ছেড়ে বহুদূরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করার মধ্যেও আনন্দের ভিন্ন একটি মাত্রা আছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে বন্ধুরা একসঙ্গে খোশগল্প করা, ইফতার প্রস্তুত করা, ইফতার ভাগাভাগি করে খাওয়ার মধ্য দিয়ে পরিবারের শূন্যতা যেমন অনেকটা দূর হয়, তেমনি বন্ধুদের সঙ্গে হৃদ্যতাও বৃদ্ধি পায়।
নাজমুল আলম, ১ম বর্ষ ইতিহাস বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় খাবারের সমস্যা
পরিবার ছাড়া রমজান কখনোই ভালো কাটার কথা না।তবুও প্রথম দিকে বন্ধুরা সবাই ছিলো কোনো একভাবে পার করে দেয়া যাচ্ছিলো।দিন বাড়ার সাথে সাথে ক্যাম্পাস খালি হওয়া শুরু করলো তার সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবারের অভাব প্রখর ভাবে অনুভূত করা শুরু হলো।পাশাপাশি হলের ক্যান্টিন, ডাইনিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে খাবার দাবার নিয়েও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে বেশ।
শাহ পরান, ১ম বর্ষ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ছোট ছোট কিছু ঠোঙা, বড় পেপার আর খোলা একটা জায়গা। এটাই ভার্সিটি ক্যাম্পাসের ইফতার।
পরিবার ছেড়ে এত দূরে এসে এটাই প্রথম রমজান। রোজা শুরুর আগে আগে খুবই মন খারাপ হচ্ছিল। মা – বাবা নেই,বোন নেই। একা একা কীভাবে কাটবে আমার দিনগুলো! কার সাথে ইফতার করবো, সেহরিই বা কার সাথে! দেখতে দেখতে রোজা শুরু হয়ে গেল।
উপলব্ধিটা ভালোই ছিল। বন্ধুরা সাথে থাকলে আসলে কখনোই একা লাগে না। বাইরে ইফতার করবো না ভাবলেও বিকেল হতে না হতেই বন্ধুদের ফোন কল। বাধ্য হয়ে সবার সাথেই ইফতার। ছোট ছোট প্যাকেটে বুট,বুন্দিয়া, কতো রকম চপ,মুড়ি,সরবত,জুস। খোলা মাঠে বসে বড় পেপার বিছিয়ে সব মেখে আযানের অপেক্ষা। এর মধ্যেই গল্পে গল্পে কত প্রসঙ্গ নিয়ে হাসি – ঠাট্টা। সব মিলিয়ে ইফতার গুলো ভালোই কেটেছে।
তবে সেহরিতে মা কে অনেক মিস করেছি। মায়ের ফোনে ঘুম ভাংলেও বাড়িতে যেমন উঠেই সব তৈরি পেতাম,তা পাওয়া হতো না। নিজেকেই করতে হয়েছে সবটা। যাই হোক। দারুণ এক অভিজ্ঞতা। ভার্সিটি জীবনের প্রথম রমজান।স্মরণীয় হয়ে থাকবে স্মৃতির পাতায়।
ফাউজিয়া হাসান বিন্তি, ১ম বর্ষ নাট্যকলা বিভাগ