The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম সাজে সেজেছে বেরোবির ক্যাম্পাস

বেরোবি প্রতিনিধি: লাভা ছড়িয়ে, সৃষ্টির কারুকাজে দিবারাত্রির উন্মুক্ত শূন্যের পানে চেয়ে বহুযুগ ধরে। ‘তুমি সেই কৃষ্ণচূড়া যার আলাপন প্রকৃতির প্রতিটি সূক্ষ্ম সরণির সাথে বহুযুগ ধরে। তুমি সেই কৃষ্ণচূড়া…’ কবি তার ভাষায় এমনটাই তুলে ধরেছেন তার সৃষ্টিতে।

নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ফুলের মায়ায় জড়িয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস। চোখ ধাঁধানো টকটকে সিঁদুর লাল কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম সাজে সজ্জিত হয়েছে পুরো কৃষ্ণচূড়া সড়ক জুড়ে । গ্রীষ্মের শুরুতেই পুরো ক্যাম্পাস যেন কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে রেঙেছে। সূর্যের সবটুকু উত্তাপ যেন কেড়ে নিয়েছে টুকটুকে লাল এই কৃষ্ণচূড়া। সবুজ বেরোবির ৭৫একরে গাঢ় লালের বিস্তার যেন বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তরে রক্তিম সূর্যের প্রতীক আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারই প্রতিনিধিত্ব করছে। অনিন্দ্য সুন্দর বাংলাদেশের মধ্যে এ চত্বর যেন এক টুকরো বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। কৃষ্ণচূড়া যেন সূর্যের সবটুকু উত্তাপকে শুষে নিয়ে সৌন্দর্যের এক অভিনব উত্তাপ ছড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাস।সে উত্তাপেই পুড়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য বিলাসীসহ সকল ক্যাম্পাসবাসী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দুই নাম্বার গেইট দিয়ে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ ও স্বাধীনতা স্মারক মাঠের উত্তর পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ।গাছগুলোর শাখায় শাখায় ফুটেছে রক্তবর্ণ ফুলের সমাহার। এর ফলে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় দুই নাম্বার গেইটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। এই কারনে এই সড়কের নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণচূড়ারোড।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, পথচারী বা ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সময় হৃদয় কাড়ে নয়ন জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া। মনের অজান্তেই মুখে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে আসে ‘বাহ! কী চমৎকার দৃশ্য। কী মায়াবী জাল বিস্তার করেছে আকাশের পানে।’শহর থেকে ৫কিলোমিটার দূরে পার্কের মোড়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়েই আগুন রাঙা সেই কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য আলো ছড়াচ্ছে। গাছে গাছে নয়ানভিরাম রাঙা ফুলের মায়া। দূর থেকে দেখলে মনে হবে গাছগুলোতে আগুন লেগেছে, কাছে গেলে চোখ আটকে থাকে রক্তিম আভার ফুলের সমাহারে। গাছের নিচে পড়ে থাকে অজস্র ঝড়াপাপড়ি,যেন মনে হয় রক্তবর্ণ লাল গালিচা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক,চত্ত্বর ও রাস্তার পাশে অসংখ্য গাছ এ ফুলের রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস।

এছাড়াও জারুল,হিজল,বকুল, সোনালু সহ নাম জানা অজানা অসংখ্য ফুলের গন্ধে ভরে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ।গন্ধহীন এ ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। নমনীয় কোমল, মাঝে লম্বা পরাগ। ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেই!কৃষ্ণচূড়ার এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের ছবি ঘুরছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ও তাদের ওয়ালে।

কৃষ্ণচূড়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী লুবনা হক মিমি বলেন, দীর্ঘ ছুটিতে আছে প্রাণের এই ৭৫ একর। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসের প্রাণ শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে যেনো অপরুপ সাজে সেজেছ প্রাণের কৃষ্ণচূড়া রোড, দুই পাশে সারি সারি করে লাগানো এই মাঝারি আকারের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো মনমাতানো রঙ আর সৌরভ দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেকটা ফাঁকা এই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই দূর থেকে দূরে চোখে চোখে পড়ছে এই সবুজের বুকে লাল কৃষ্ণচূড়া পুষ্পরাজি। ঋতুরাজ বসন্ত পেরিয়ে গেলেও মনে হচ্ছে প্রতিটি দিন ই এখন বসন্ত, কিছুদিন পর ক্যাম্পাসের জারুল আর হলুদ সোনালুগুলোও যেন প্রাণ ফিরে পাবে তাদের নিজস্বতায়। প্রাণের এই জারুল, কৃষ্ণচূড়া, শ্বেতশুভ্র কাশফুল আর সোনালু বহুগুণে রূপবতী করে তোলে প্রাণের এই ৭৫ একরের ক্যাম্পাস কে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সবুর খান বলেন, কৃষ্ণচূড়া যেন ভাষার রঙ হয়ে বেরোবির বুকে আবার আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।রোমাঞ্চকর প্রেমালাপ যেন উপযুক্ত হয়ে উঠেছে এই কৃষ্ণচূড়ার লালিমায়।প্রিয় মানুষের খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার এক অনন্ত প্রয়াস যেমন কবি কাজী নজরুল চেয়েছিলেন “মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী দেবো খোঁপায় তারার ফুল” তেমনি বেরোবিতেও একই পরিবেশ তৈরি করেছে এই ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া।যেমন লাল ফুলে ভ্রমর জড়ো হয় বিভিন্ন দিক থেকে তেমনি এই ফুল দেখে মানব মনেও প্রেম উদিত হয়।এই সৌন্দর্য পৃথিবীর অমৃত লহরীর মতো যার ব্যাখার অন্ত নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় হলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।এখন ক্যাম্পাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুল গুলো হলো জারুল, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু।আবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাল সোনাই।এখানে প্রায় ৪০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে।গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল ফোটা শুরু করে এবং এই ফুলগুলো গ্রীষ্ম মৌসুমকে উজ্জ্বল করে রাখে।পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং বাইরে থেকে আসা সৌন্দর্যপিপাসু লোকদের পিপাসা মিটাতে সাহায্য করে।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিখ রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত যা গুলমোহর নামেও পরিচিত। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো সাধারণত বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত হয়। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। শীতকালে পাতা ও ফুল ঝড়ে যায়, বসন্তে নতুন পাতা ও কুশিতে নতুন সাজে সেজে ওঠে গাছ।

এম কে পুলক আহমেদ/

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.