বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ে (বাকৃবি) ‘বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রভাবসমূহথ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অর্থায়নে বুধবার (০৯ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোমেটেরিওলজি বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের প্রধান ড. মো. শামীম হাসান ভুইঁয়া। আলোচনা সভায় বাংলাদেশের কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং আলোচনা শেষে একটি উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করা হয়।
এগ্রোমেটেরিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ.বি.এম আরিফ হাসান খান রবিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং এগ্রোমেটেরিওলজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীবৃন্দ।
মূল বক্তব্যে ড. মো. শামীম হাসান ভূঁইয়া বলেন, জলবায়ুর যে কোনো পরিবর্তন পরিবেশ এবং এর বাসিন্দাদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ফ্যাক্টর যা জীবের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতির ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। জীবন ও সম্পত্তির এই ক্ষয়ক্ষতিগুলি জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে কিনা তা প্রশ্ন তোলে।
আইপিসিসি থার্ড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট (টিএআর) অনুসারে গত শতাব্দীতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ০.৬” সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক জীব এবং বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন বা মিউটেশনের সম্মুখীন হয়েছে। নৃতাত্ত্বিক নির্গমনের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে হাইড্রোলজিক্যাল পরিবর্তনের প্রভাব গ্রীনহাউস গ্যাস অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
বার্ষিক গড় ভূপৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি মহাদেশে মহাসাগরের তুলনায় বেশি এবং মেরু অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের তুলনায় বেশি। সবকিছুর মূলে রয়েছে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বর্তমানে পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে, সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে হিমালয়ের বরফ ক্ষয়। তাই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে হঠাৎ বন্যা, ঘূর্ণি ঝড়, খরাসহ নানা সমস্যা। যে কারণে কৃষি ক্ষেত্রটি সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এজন্যে আমাদের প্রয়োজন দক্ষতা সম্পন্ন আবহাওয়াবিদ তৈরি করা।
এছাড়া তিনি ব্যাখ্যা করেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্লোবাল ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়, মাল্টি হ্যাজার্ড এবং বন্যা মৃত্যুহার চরম পর্যায়ে রয়েছে। গ্লোবাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করে গ্লোবাল অবজারভেশনে ব্যবস্থাপনায় তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে ২৭৪টি আবহাওয়া পর্যেবক্ষণাগার বসানো হয়েছে। স্থবির কুয়াশার পূর্বাভাসের মাধ্যমে ছত্রাকজনিত রোগের পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।
এছাড়া ১৩টি ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে এখন ভূমিকম্প পরিমাপ করা হয়। এতে অনেক তাড়াতাড়ি ও সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফানেল আকৃতির হওয়ার কারণে হিমালয় থেকে সব নদী বাংলাদেশের উপর দিয়ে গেছে। আমাদের মহাদেশীটি অগভীর আকৃতির হওয়ায় অল্পতেই খুব বেশি পানির নিয়ে তলিয়ে যায়।
আবহাওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য সহজে পাওয়া এবং তা কৃষকের মাঝে সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সেই সব প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বিস্তারে করণীয় নিয়েই দক্ষ ব্যক্তি গড়ে তুলতেই কাজ করবে এগ্রোমেটেরিওলজি বিভাগ।