নাবিদ, কুবি প্রতিনিধিঃ ২০ শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এই নীতি অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দিন সশরীরে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
২০২২ সালের ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সপ্তাহে এক দিন (বৃহস্পতিবার) অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় , ১৯টি বিভাগে মধ্যে ১০টিতে অনলাইনে ক্লাস রাখা হয়নি। যে ৯টি বিভাগে অনলাইন ক্লাস রাখা হয়েছে তারমধ্যে বেশির ভাগ বিভাগে ক্লাস নেওয়া হয় না। প্রশাসন ও শিক্ষকদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ব্যয় সাশ্রয়ের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে এক দিন সশরীরে ক্লাস বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও কোনো ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। এইদিকে আমাদের ওপর চাপ বাড়ছে। এমনিতে চার মাসের সেমিস্টার তারমধ্যে আবার এক দিন বন্ধ। আমাদের ওপর অতিরিক্ত ক্লাসের চাপ ও ক্রেডিট পূরণ করার জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছে কোর্স শিক্ষকরা। অনেক সময় সিলেবাস শেষ না করেই পরীক্ষা নিয়ে নিচ্ছে।
ক্লাস না রাখার বিষয়ে শিক্ষকরা জানান, অন্য চার দিনে ক্লাস নিয়ে ক্রেডিট ঘন্টা পূরণ করতে পারায় অনলাইনে ক্লাস রাখা হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, অন্য দিনগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস, প্রেজেন্টেশন ও অ্যাসাইনমেন্টের কারণে মানসিক ও শারীরিক চাপ তৈরি হচ্ছে। অনলাইনে ক্লাস থাকলেও না হওয়ার পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনীহা রয়েছে।
অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি অনলাইনের চেয়ে সশরীরে ক্লাস নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া প্রয়োজন। তা সম্ভব হয় সশরীরের ক্লাসে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ খরচ কমানোর লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ক্লাস বন্ধের নামে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পিছনে কোনো যৌক্তিকতা নেই। করোনার কারণে সেমিস্টার চার মাসের হয়ে গেছে তারপরেও একাডেমি কার্যক্রম একদিন কমিয়ে ফেলার কোনে যৌক্তিকতা দেখিনা আমরা, তাতে আমাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের কথা বলা থাকলেও আদৌও কোনো ক্লাস অনলাইনে হয়নি আমাদের।
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে বৃহস্পতিবার অফ থাকায় টানা তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিস বন্ধ থাকে যার ফলে অনেক বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমাদের। মানসিক চাপ বাড়ছে আমাদের। এইভাবে চলতে থাকলে সেশনজটের কবলে পড়বো আমরা । মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের কাছে বিনীত অনুরোধ শীগ্রই যেন বৃহস্পতিবার একাডেমি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রশাসনের এমন বিপরীতমুখী কার্যকলাপের বিষয়ে উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ূন কবিরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
তবে বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে তিনি জানান, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। যদি এটা বাস্তবায়ন না করা যায়, তাহলে কিভাবে ক্লাস নেওয়া যায়, তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে আনতে ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর ক্রেডিট ঘন্টা অপরিবর্তিত রেখে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু যথাসময়ে কোর্স শেষ করতে না পারায় সেমিষ্টার ছয় মাসে নেওয়া হচ্ছে ১০টির অধিক বিভাগে। ফলে কমছে না সেশনজট। অনলাইনে ক্লাসের বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনলাইন ক্লাস নিলে অনেকে সংযুক্ত হতে পারেন না।
এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন একাধিক শিক্ষক। অধ্যাপক মো. আৰু তাহের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাড়ি ব্যবহার করে অফিসে আসেন। বিভিন্ন মিটিং হয় প্রশাসনের। ক্লাস নিতে কী সমস্যা?” অধ্যাপক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, আমি উপাচার্যকে অনুরোধ করব, ক্লাস যেন সব দিন সশরীরে নেওয়া হয়।