নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রসাশন। তবে, এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘হল ছাড়তে চান না, ক্লাসে ফিরতে চান।’
গত ৩০ এপ্রিল ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ওইদিন রাত ১২ টার দিকে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমরা স্বতস্ফুর্তভাবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করছি। এইভাবে প্রশাসন কোনকিছু বন্ধ করতে পারে না। আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে খেলার অধিকার কারো নেই। আমরা সবকিছু বাদ দিয়ে দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চাই। এভাবে যদি সবকিছু বন্ধ রাখে, তাহলে আমাদের একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কে নিবে? আমরা চাই, দ্রুত অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের এক শিক্ষার্থী জানান, ভিসি স্যার-শিক্ষক সমিতি যা ইচ্ছে, করুক তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও ধীক্কার জানাচ্ছি। আমরা সেশনজটে পড়ে নিজেদের পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না। অনতিবিলম্বে সকল ক্লাস এবং হল খুলে দেওয়া হোক। তবে সাথে সাথে শিক্ষক সমিতির প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখে বলতে চাই আপনারা ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি না করে অন্য পন্থায় আপনাদের দাবি আদায় করুন। আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই।
শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থী আমেনা ইকরা বলেন, প্রশাসন নিরাপত্তার অযুহাতে অস্ত্রের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়া করতে চাচ্ছে। হল ছাড়া মানে অপবাদ আর অপমান মেনে নেওয়ার সামিল। আমরা আমাদের হল ছাড়ব না, প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবো। সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ইউনিটি বজায় রেখে প্রতিবাদ করার। বর্তমান ব্যাচগুলোর সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে আগামী ৩ তারিখে যে ভর্তিপরীক্ষা নিচ্ছে তারও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আরেক শিক্ষার্থী জানান, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নাটক বন্ধ করা হোক। আমরা কোনভাবেই হল ছাড়ছি না এবং অতিদ্রুত ক্লাসে ফিরতে চাই। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত তার অযোগ্যতার প্রমাণ। উপাচার্য স্যার বলেছেন, আমাদের আবাসিক হলগুলোতে নাকি অস্ত্র ডুকতেছে, এগুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। অনতিবিলম্বে এসবের বন্ধ চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী ফরহাদ জানান, প্রশাসন থেকে হল ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখান করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এটা একটা ছেলেমানুষি সিদ্ধান্ত। আমরা কোনভাবেই হল ছাড়বো না। আমাদের যদি হল থেকে বের হতে চাপ দেওয়া হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সেটা প্রতিহত করবো।
এর আগে, গতকাল রাত্রে চলমান সংকটের কারণে ৯৩ তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহ বন্ধের সিদ্ধান্ত সহ মোট চারটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো
সিদ্ধান্ত চারটি হলো- বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখ হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে শুধুমাত্র জিএসটি গুচ্ছভূক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষাবর্ষ: ২০২৩-২০২৪ ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম চলমান থাকবে। আগামী ১ মে বিকাল ৪ টার পূর্বে শিক্ষার্থীদেরকে স্ব স্ব হল ত্যাগ করতে হবে।