কুবি প্রতিনিধি: সমকালীন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহবান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সেই সিন্ডিকেটের আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে পাঁচজন ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগের ডিনদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন করে এ নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় (৯১ তম) এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচজন ডিন হলেন, বিজ্ঞান অনুষদে ফার্মাসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ দেবিনাথ, কলা ও মানবিক অনুষদে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন, প্রকৌশল অনুষদে আইসিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান। দায়িত্বপ্রাপ্তরা আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে আলোচ্য সূচি পরিবর্তনের বিষয়ে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য জানান, আজকে এজেন্ডা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা শুরু হলেও পরে উপাচার্য ডিন নিয়োগের বিষয়ে নতুন করে এজেন্ডা তুলেন। এসময় বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুললে উদ্ভূত পরিস্থিতির এজেন্ডা প্রত্যাহার করে ডিন নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ এই ডিন নিয়োগ এর এজেন্ডা পরেও করতে পারতো। যেটা আইন সম্মত না।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাছান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আইনগতভাবে সিন্ডিকেট সভা এক বিষয়ে ডাকার পর অন্য বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব না। যে বিষয়ে ডাকা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। ডিন নিয়োগ তো প্রচলিত আইনের বিষয় এবং আইন দ্বারা এটা সুনির্দিষ্ট কার পরে কে হবে। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক জানে। ডিন নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেট সভার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না, কারণ এটা আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট।
শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, আজকের সিন্ডিকেটের সভাপতি মাননীয় উপাচার্য চরম জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির যে যৌক্তিক দাবিগুলোর ছিল সেগুলোর প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে সিন্ডিকেট করেছেন। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কীভাবে শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা না করে ওনি অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়ার জন্য আজকের সিন্ডিকেট করেছে। কিন্তু সবাই আশা করেছিলো শিক্ষকদের বিষয়ে আলোচনা করবেন। বিজনেস ফ্যাকাল্টির একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। ওনার অবৈধ কর্মকাণ্ডের আরও একটি প্রমাণ দিয়েছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, ওনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান না। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রেখেছেন। এবং সামনের দিকেও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে যাচ্ছেন।
শিক্ষক সমিতির সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ড.জান্নাতুল ফেরদৌস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘উদ্ভূত’ পরিস্থিতি সমাধানে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কীভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয় যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। যখন একটা অ্যাজেন্ডার মধ্যে আরেকটা অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয় তখন এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে তা হীন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। একজন কর্মকর্তা শিক্ষকদের হেনস্তা করলেন সেটা নিয়ে কোন আলোচনা করা হলো না, শিক্ষকদদের দাবি দাওয়া নিয়ে কোন আলোচনা করা হলো না। এটা কীভাবে সম্ভব? ছাত্র-ছাত্রীর পরেই আমরা শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্টেকহোল্ডার। কিন্তু আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এদিকে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন শিক্ষক ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানপত্র প্রেরণ করেছেন কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। শুধুমাত্র ডিন হিসেবে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।