নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংস: এশিয়া ২০২৫ এ বাংলাদেশ থেকে তালিকায় স্থান পাওয়া ২৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় পাওয়া যায়নি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নাম।
৬ নভেম্বর (বুধবার) যুক্তরাজ্য ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা ভিত্তিক সংস্থা কিউএস তাদের ওয়েবসাইটে এশিয়া র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপি যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে থাকে তার মধ্যে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং অন্যতম। এই র্যাঙ্কিং কয়েকটি মূল সূচকের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একাডেমিক সুনাম, গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, প্রতি গবেষণাপত্রে উদ্ধৃতির হার এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা।
এদিকে তালিকায় র্যাঙ্কিং এ নোবিপ্রবি না থাকায় বিষয়টি নিয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো মানের গবেষক রয়েছেন, আছে গবেষণাও। এছাড়া শিক্ষার পরিবেশও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থিতিশীল। তারপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
অসন্তোষ প্রকাশ করে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী ও তরুণ গবেষক মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নোবিপ্রবির মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। কিন্তু তাদের মেধাকে শাণিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা যথাযথভাবে নিতে দেখা যায় না। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম আমাদের নোবিপ্রবিতে ১৮টি বিভাগে অধ্যাপকই নেই। নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হলেও এর বাইরেও বিভাগ রয়েছে। নতুন বিভাগ গুলোতে রিসার্চ শব্দটাই অপরিচিত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে যেভাবে কঠোরভাবে নীতিমালা অনুসরণ করা হয় সেভাবে আমাদের এখানে দেখা যায় না। তাই দেখা যায় প্রভাষক হয়ে যোগদানের দুই বছর পর অনেকে বাইরে ডিগ্রি নিতে চলে যায়, অনেকে পিএইচডি করতে গিয়ে ফিরে আসেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ ও গাইডলাইন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ৫০% শিক্ষার্থী ও গবেষণা করতে পারতো তাহলে সেরা দশে থাকতো। হয় ফান্ড নাই, নাহয় গাইডলাইনের অভাব ইত্যাদি নানা সমস্যা কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেল এর পরিচালক ও দেশসেরা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘র্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে আসলে অনেকগুলো প্যারামিটার কাজ করে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট। আমাদের ওয়েবসাইট ভালোভাবে ডেভেলপ না হওয়ায় গবেষণার তথ্যগুলো আমরা হালনাগাদ করতে পারি না। গত উপাচার্যের আমলে এটি হয়ে উঠেনি ফলে আমাদের অনেক কাজ হওয়া স্বত্তেও র্যাঙ্কিং এ নাম আসছে না। এছাড়া ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, বিদেশী শিক্ষার্থী সংখ্যা, গবেষণার মান সবকিছু যখন আমরা ওয়েবসাইটে নিয়ে আসতে পারবো তখন আশা করা যায় আমাদের র্যাঙ্কিং মান উন্নতি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন উপাচার্য স্যার আসার পর আমরা ওয়েবসাইটটি ফাংশনাল করতে বলেছি। বর্তমানে ৫ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি করছেন। সামনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া আমরা প্রতিবছর রিসার্চ এওয়ার্ড ও পাবলিকেশন এওয়ার্ড পুুনরায় চালু করেছি। শিক্ষকদের মধ্যেও গবেষণা বৃদ্ধিতে অনুষদ ভিত্তিক এওয়ার্ড দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
নবনিযুক্ত নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল হক জানান, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। বর্তমান ওয়েবসাইটে বলতে গেলে অনেক কিছু আপডেটেড নেই। আমরা ইতিমধ্যে এটা নিয়ে রিসার্চ সেল, আইকিউসি সেলে ও আইটি সেলের সাথে মিটিং এর পরিকল্পনা নিয়েছি। সেখান থেকে কমিটি করে দেওয়া হবে। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা ভালো একটি ফলাফল পাবো এবং আগামীবার থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম র্যাঙ্কিং এ থাকবে।’