জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের ‘অবাঞ্ছিত’ সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটন দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। তবে ‘অপমানিত’ হওয়ার ভয়ে তিনি দলীয় কর্মসূচিসহ অন্য কর্মসূচিতে আসেন না বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের একটি অংশ। ফলে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান জাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবুও কর্মসূচিতে অংশ নেননি জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন। এছাড়া গত শনিবার (২৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা সমিতির ইফতার অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ঢাকা-১৯ (সাভার ও আশুলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে আসেন। সেখানেও অংশ নেননি লিটন।
এছাড়া গত ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাবি শাখা ছাত্রলীগের দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নেননি লিটন। এমনকি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে দলীয় কর্মসূচিতেও আসেননি তিনি। এছাড়া একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায়ও উপস্থিত হননি। পাশাপাশি গত ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবসের কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যায়নি।
তবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে পৃথকভাবে নিজের অনুসারীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক লিটন। এছাড়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চেও নিজের অনুসারীদের নিয়ে পৃথক কর্মসূচি পালন করেন তিনি। ফলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন তারা।
জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি শাখা সাধারণ সম্পাদক লিটনের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন সাত হলের অনুসারীরা। হলগুলো হলো– মীর মশাররফ হোসেন হল, আ ফ ম কামালউদ্দিন হল, শহীদ সালাম-বরকত হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, আল-বেরুনী হল ও রোকেয়া হল। পরে লিটনের বহিষ্কার দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, কালো পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচিও পালন করেন তারা।
অন্যদিকে ‘অপমানিত’ হওয়ার ভয়ে দলীয় কর্মসূচিসহ অন্য কর্মসূচিতে লিটন অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, লিটন হল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের কোথাও গেলেই ধাওয়া দেওয়া ও গালিগালাজ করেন বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে, গত সোমবার একটি সাংবাদিক সংগঠনের ইফতার অনুষ্ঠান শেষে হলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন লিটন ও তার হলের নেতাকর্মীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের সামনে গেলেই ধাওয়া দেন বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা। এর আগেও একাধিকবার ধাওয়া ও গালিগালাজ করার ঘটনা ঘটেছে।
কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে পৃথক কর্মসূচি পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণেই পৃথক কর্মসূচি করতে হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে, আমাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার কোন ব্যতয় ঘটছে না। আমরা সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ আছি।’
অন্যদিকে হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত করার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের ২১ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এরপর ২৭ দিন পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন।
এর আগে, ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে জাবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় এক বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে। নানা গ্রুপ তৈরি হওয়ায় ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা। নেতাকর্মী জড়াচ্ছেন নানা অপকর্মে।