বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে সেশনজটের আশংকা করছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
৩০ জুন (রবিবার) সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রত্যয় স্কিম’ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একাত্মতা পোষণ করে। এমতাবস্থায় ১লা জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে। আগামী ৭ জুলাই শিক্ষক লাউঞ্জ ‘মুখবন্ধে’ সকাল ১১ টায় উপস্থিত হয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক।
এদিকে ৬ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত টানা এক মাসের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শেষে ৭ জুলাই থেকে ক্লাস ও অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কিনা, খুললেও ক্লাস হওয়ার বিষয় নিয়ে সন্ধিহান শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের ছুটি ও নতুন করে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণায় সেশন জটের আশংকা করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাদুল ইসলাম পলক বলেন, ১লা জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করায় সেশন জটে পড়ে যাওয়ার আশংকায় আছি। ইতোমধ্যে এক মাস গ্রীষ্মকালীন বন্ধ শেষ হতে না হতেই আবার ক্লাস বন্ধ। এর আগেও নিজ ডিপার্টমেন্টের কিছু সমস্যার জন্য পিছিয়ে পড়েছি অন্য সকল ডিপার্টমেন্ট থেকে। এখন আবার সকল কিছু বন্ধ হওয়ায় যেমন পড়ালেখা থেকে মন সরে এসেছে ঠিক তেমনি সেশন জটে পড়ে সঠিক সময় স্নাতক শেষ করতে পারব কিনা সে আশংকা তৈরি হয়েছে।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী নুসরাত জাহান লাবণ্য বলেন, শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারণ করোনা আমাদের থেকে ইতোমধ্যে দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ এক মাস ছুটির পর ক্লাস না হলে আমরা পড়াশোনা করতে পারবো না। চাকরির বাজার তো সোনার হরিণ, ওই বাজারে প্রবেশ করতে দেরি হবে। শিক্ষার্থীরা সময় কম পাবে।
এবিষয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুষার কান্তি সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমাদের এই আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা এই কাজ করছি। নাহয় আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে গেলে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবে, শিক্ষকতা পেশার প্রতি তাদের অনীহা জন্মাবে। মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোক এটা আমরা চাই, এই আন্দোলন মূলত মেধাবীদের ভবিষ্যতের যোগ্য মূল্যায়নের জন্য। কারণ ১লা জুলাই থেকেই যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকা ও ক্লাস, পরীক্ষা নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার ও ছুটির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে বা ছুটি থাকবে এবিষয়ে বলা আছে। সে অনুসারে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও দাপ্তরিক কার্যক্রমও খোলা। দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকরা তাদের কমিউনিটির সাথে একাত্নতা পোষণ করে কর্মবিরতিতে আছেন, কতদিন থাকবেন তা তাদের উপর নির্ভর। যেহেতু এটা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মসূচি, এক্ষেত্রে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা করে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কিছু নেই।