সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২০ এর লিখিত পরীক্ষা আগামী এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হবে। এবার প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র বিভাগীয় শহরগুলোতে হচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা মহানগরে এ পরীক্ষার আয়োজন করতে যাচ্ছে অধিদপ্তর। ১, ৮, ১৫, ২২ ও ২৯ এপ্রিল সকাল ১০টা/বিকাল ৩টা থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার আর মাত্র কদিন বাকী। কম সময়ে কিভাবে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিবেন সেই সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হয়েছে।
পরীক্ষা পদ্ধতি ও মানবন্টন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুই ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমে নেওয়া হয় এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর যোগ হবে। প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় ৮০ মিনিট বা ১ ঘন্টা ২০ মিনিট। গড়ে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরের জন্য ১ মিনিট সময় পাওয়া যাবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষায়। এ ধাপে থাকে ২০ নম্বর। ভাইভায় টিকলে পরবর্তী যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
যেভাবে ১ মাসে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করবেন-
প্রথমে আপনি ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বই থেকে ৬****** (6 Star), ৫*****(5 Star) ও ৪**** (4 Star) দেয়া টপিকগুলো কমপক্ষে ৩বার ভালো করে শেষ করুন। কারণ এই টিপকগুলো থেকে পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রশ্ন কমন আসবে। বাংলাদেশের প্রথম সাজেশন-ভিত্তিক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ গাইড ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন Analysis করে দেয়া হয়েছে কোন টপিক বেশি Important আর কোন টপিক কম Important ; কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি আসে আর কোন টপিক থেকে প্রশ্ন কম আসে।
*মনে রাখবেন, যেহেতু সময় একেবারেই কম এখন শুধু Important বিষয়গুলো বারবার পড়ে পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পেতে হবে। Important বিষয়গুলো বারবার এইজন্য পড়তে হবে যে, যেন পরীক্ষায় কমন পড়লে সঠিক উত্তর মিস না হয়। বিগত সালের প্রশ্ন Analysis করে দেখা গেছে ম্যাক্সিমাম প্রশ্নই কমন টপিক থেকে আসে। কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হওয়ার কারণে ভুল উত্তর দিয়ে আসে; আর পরীক্ষায় পাশ না করতে পারার আফসোস থেকে যায়! আফসোস করে আর বলে, ‘ইশ! এতো সহজ প্রশ্ন আসলো তারপরও ভালোভাবে উত্তর করতে পারলাম না!
প্রশ্ন কিন্তু সবসময় সহজই হয় দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া, কিন্তু পরীক্ষার আগে উলটো-পালটা সব পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর মাথা ঘুলিয়ে যায় তখন প্রশ্ন কঠিন মনে হয়, পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর আবার সেই প্রশ্নই অনেক সহজ মনে হয়!
এরপর পর্যায়ক্রমে ৩*** (3 Star), ২** (2 Start) টপিকগুলো ভালোভাবে শেষ করুন কমপক্ষে ২ বার।
*এরপর বিসিএস প্রিলির ৪২তম-৩৫তম পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো ব্যাখ্যাসহ ভালো করে পড়বেন (তবে ৪২তম -১০তম পর্যন্ত পড়তে পারলে আরো ভালো হয়)। কারণ বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন থেকে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে।
*প্রতিমাসে আপডেট থাকার জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়বেন। বিশেষ করে গত তিন মাসের ৩ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়বেন।
*এরপর আপনি বইয়ের শেষে অংশে থাকা মডেল টেস্টগুলো ১ ঘণ্টা সময় ধরে দিন। পরীক্ষার হলে যদিও সময় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট, সেখানে কিছু সময় নষ্ট হয়। তাই বাসায় আরেকটু কম সময় ধরে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা দেয়ার পর উত্তরপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখুন আপনি মোট কত নাম্বার পান নেগেটিভ নাম্বার মাইনাস করার পর। যদি আপনি দেখেন যে মডেল টেস্টে ৭০ বা তারও বেশি নাম্বার পান তাহলে আপনার প্রস্তুতি ভালো হয়েছে বলে ধরে নিবেন। এবং পরীক্ষায় ভালো করবেন বলে বিশ্বাস রাখা যায়।
সিলেবাস:
ইংরেজিঃ গ্রামারে Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- এর নিয়ম জানতে হবে এবং গ্রামার বইয়ের উদাহরণ থেকে চর্চা করতে হবে। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idioms, Synonym, Antonym. ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ আসতে পারে। তাই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করলে ভালো করা সম্ভব।
বাংলা ও ইংলিশের জন্য যেকোন সিরিজের বই (নতুন সংস্করণ) থেকে শুধু মাত্র চ্যাপ্টারের শেষে যুক্ত বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলি সলভ করবেন বিস্তারিত পড়ার সময় নাই। তাছাড়া প্রশ্ন ডিরেক্ট কমন পড়বে অযথা প্রেসার নেবার দরকার কি!
#বাংলা: সন্ধি(২), বিপরীত শব্দ (২/৩), সমার্থক শব্দ(২), শুদ্ধ বানান (২), এককথায় প্রকাশ (২), সমাস (২), বাগধারা (২), কারক-বিভক্তি, ছদ্মনাম/উপাধি, দ্বিরুক্ত শব্দ, ধ্বনি, বর্ণ, বাক্য (সরল, জটিল, যৌগিক) ও পদ নির্ণয়।
প্রচীন যুগ,মধ্যযুগ* থেকে ১ অথবা ২ মার্কস আসতে পারে তবে মধ্যযুগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ,আধুনিক যুগের সাহিত্য কর্মের মধ্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস/রচনাসমগ্র(১/২ মার্কস)এবং পরিচিত কবি সাহিত্যিকের রচনা বা জন্ম মৃত্যু নিয়ে ১/২ মার্কস আসতে পারে যেগুলো পারার মত।
#ইংলিশ: যেকোন সিরিজের বই থেকে পড়লেই চলবে তবে English For Competitive Exams বইটিতে বিগত সালের প্রশ্ন বেশি থাকায় এটাই বেস্ট বই। Right form of verb,Fill in the blank with appropriate word/preposition(2), Voice Change (1/2),Narration(1), Sentence Correction(2),
Spelling (2), Parts of speech Identification (2),Synonym+antonym(3/4), Idioms & Phrase.
#গণিত: দশমিকের (যোগ, বিয়োগ, গুণ*, ভাগ*), শতকরা, লাভ-ক্ষতি, মুনাফা, ল.সা.গু, গ.সা.গু, ঐকিক নিয়ম (কাজ, খাদ্য, সৈন্য), অনুপাত:সমানুপাত, সংখ্যা পদ্ধতি, বীজগাণিতিক মান নির্ণয়, উৎপাদক নির্ণয়, গড়, মধ্যক, প্রচুরক নির্ণয়, ত্রিভুজক্ষেত্র, বর্গক্ষেত্র, আয়তক্ষেত্রের বেসিক সূত্রের অংকসমূহ, সরলরেখা, ধারা, গাছের উচ্চতা/মিনারের উচ্চতা/মইয়ের দৈর্ঘ্য/সূর্যের উন্নতি কোন ইত্যাদি বিষয়ক অংকসমূহ।
#সাধারণ জ্ঞান, দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও কম্পিউটার: এই অংশে ভাল করার জন্য খুব বেশি পড়তে হবেনা। সাধারণ জ্ঞান অংশে ১৪/১৫ টার মত প্রশ্ন আসতে পারে তার ভিতর ১০-১২ টাই হবে সালের রিপিট প্রশ্ন।বাকী ২/৩ টা সাম্প্রতিক বিষায়াবলী দিতে পারে। তারপরও ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ,বাংলাদেশের জনপদ, নদ-নদী, বাংলাদেশের লোকজ ঐতিহ্য অন্তর্জাতিক সংগঠন, জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন, বিশ্বের বিভিন্ন শহরের নাম ইত্যাদি…
বিজ্ঞান থেকে দু’তিনটি কমন প্রশ্ন আসবে যেগুলো চোখের পলকে গোল্লা ভরাট করা যাবে মানে হরহামেশা রিপিটেড সাল। কম্পিউটার থেকে একটি বা দু’টি প্রশ্ন আসবে একেবারে বেসিক কম্পিউটার থেকে। নিজের মগজের সফটওয়্যার থেকে কম্পিউটারের বৃত্ত ভরাট করবেন।
মৌখিক পরীক্ষাঃ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরই শুধু মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে। মৌখিক পরীক্ষায় থাকবে ২০ নম্বর। একাডেমিক ফলাফল বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর থাকবে ৫ নম্বর। এক্সট্রা কারিকুলাম (নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি) এর ওপর বরাদ্দ থাকবে ৫ নম্বর।বাকি ১০ নম্বর থাকবে সাধারণ জ্ঞানের ওপর। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রার্থীর নিজ জেলার থানা বা উপজেলার আয়তন, জনসংখ্যা, সংস্কৃতি, জেলার ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।