ডেস্ক রিপোর্ট: ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি আঞ্চলিক জেট এবং একটি মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষের পর কাউকে জীবিত পাওয়া যায়নি। ২০০১ সালের পর সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ছিল এটি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
সংকটের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একটি বিশেষ দায়িত্ব ‘কনসোলার-ইন-চিফ’। গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস রুমে সেই দায়িত্ব পালন করতেই দাঁড়িয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘কনসোলার-ইন-চিফ’-এর প্রচলিত বাংলা না থাকলেও প্রধান সান্ত্বনাদানকারী ব্যক্তি হিসেবে একে বর্ণনা করা যেতে পারে। সংকটের মুহূর্তে জনগণকে সান্ত্বনা ও আশ্বাসের বাণী শোনানো তার কাজ।
সেখানে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের সঙ্গে সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, পুরো দেশ শোকাহত। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে উদ্ধার তৎপরতায় সাড়া দেয়া ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ট্রাম্প।
এরপর তিনি বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার কারণ জানি না আমরা, তবে বেশ কিছু দৃঢ় ধারণা ও মতামত পাওয়া যাচ্ছে।’
তার ধারণা, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের আমলে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে নিম্নমানের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার নিয়োগই এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিকজ আই হ্যাভ কমন সেন্স’।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিগুলো’ বরাবরই ট্রাম্প এবং তার সহযোগী রিপাবলিকানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই তারা এ ধরনের কর্মসূচি বাতিলে উদ্যোগ নেয়। তাদের দাবি, এসব কর্মসূচিকে আমেরিকানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে এবং দুর্বল বানিয়েছে দেশকে।
এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই এর কারণ হিসেবে তাদের সেই বক্তব্যকেই সামনে নিয়ে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে ছিলেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট, পরিবহন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা। সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক আছে–– এমন কোনো প্রমাণ না দিলেও নিজেদের বক্তব্যে অটল ছিলেন তারা।
ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এখনো দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। কিন্তু তিনি কিভাবে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) নিয়োগকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করতে পারেন। তখন ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘বিকজ, আই হ্যাভ কমন সেন্স (কারণ আমার সাধারণ জ্ঞান আছে)।’ এর আগে পরে অবশ্য তিনি উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার কোনো নিশ্চিত কারণ জানা যায়নি।
এরপর তিনি জানান, ‘পুরো বিষয়টা নিয়ে তদন্ত চলছে।’ ট্রাম্প বলেন, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির কারণে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অক্ষম বা প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ‘শ্রবণ-দৃষ্টি বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন, আংশিক ও সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত, মৃগীরোগী, গুরুতর বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা, মানসিক অক্ষমতা এবং বামনত্ব’ সংক্রান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
এফএএর বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নিয়োগ কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটের আর্কাইভ ভার্সনেও একই রকম একটি তালিকা দেয়া ছিল। ডিসেম্বরে ওয়েবসাইটটি নামিয়ে নেয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটি কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ‘সুনির্দিষ্ট অক্ষমতা’ থাকা ব্যক্তিদের নিয়োগের বিষয় দেখভাল করতো।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার পদের জন্য ‘সহজাত প্রতিভাবান মেধাবী’ দরকার বলে মনে করছেন ট্রাম্প। কিন্তু, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য আনার সেই প্রয়াস কীভাবে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার পদটিকে প্রভাবিত করেছে তা স্পষ্ট নয়। এফএএ-এর ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে, যার মধ্যে একটি ভগ্নাংশ মাত্র ওই পদে কাজ করে।
এদিকে একাধিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, পোটোম্যাক নদী থেকে বহু মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সংঘর্ষের পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। সংঘর্ষের পর নদীতে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারটি। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে ওয়াশিংটনের রিগ্যান জাতীয় বিমানবন্দরে রানওয়ের কাছে আসার সময় মাঝ আকাশে সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে উড়োজাহাজটির সংঘর্ষ হয়।
যাত্রীবাহী বিমানটিতে মোট ৬০ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন আর হেলিকপ্টারে তিনজন মার্কিন সেনা ছিলেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। আমেরিকান এয়ারলাইনসের মতে, উড়োজাহাজটি ছিল আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৫৩৪২, যা ক্যানসাসের উইচিটা থেকে আসছিল। এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে, হেলিকপ্টারটি ছিল একটি সিকরস্কি এইচ-৬০, যেটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে উড্ডয়ন করেছিল। যেটি মূলত প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের সাথে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই উড়োযানের কোনো আরোহীই বেঁচে নেই বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ফিগার স্কেটিং সংস্থা ও বোস্টনের একটি ক্লাব জানিয়েছে, বিমানের যাত্রীদের মধ্যে মার্কিন ও রাশিয়ান ফিগার স্কেটিং খেলোয়াড়রাও ছিলেন। এখন পর্যন্ত ২৮ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। এর মধ্যে ২৭ জন বিমানের, একজন হেলিকপ্টারের আরোহী ছিলেন।
বিবিসি’র সহযোগী সংবাদ মাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, বিধ্বস্ত বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করেছে অনুসন্ধানকারী দল। এতে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ড থাকে। দুর্ঘটনার সময় এবং তার আগে বিমানের ককপিটে কী ঘটেছিল তাও জানা যাবে ব্ল্যাকবক্স থেকে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জেফারি থমাস দুর্ঘটনার ম্যাপ পর্যবেক্ষণ করে বলছেন, ‘হেলিকপ্টারটি ওপরে উঠছিল এবং শেষ মিনিটে এটি ২০০ ফিট থেকে সাড়ে ৩০০ ফিটে উঠে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়াও এটি ছয়বার গতিপথ পরিবর্তন করে। আমি ধারণা করছি, হেলিকপ্টারটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখবো।’ বলা হচ্ছে, এমন এলাকায় হেলিকপ্টার সাধারণত ২০০ ফিটের নিচে থাকার কথা।
সূত্র : বিবিসি