তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেছেন, শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা করতাম। যদিও অনেকে আমাকে বলেছেন, হাসিনা কখনো তাজউদ্দীন আহমদের ছেলেকে ভালো চোখে দেখবেন না। এক দিন দেখলাম আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাকে সবার সামনে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘বিএনপি অনেক টাকা বানিয়েছে। এখন আমাদেরও দুই হাতে টাকা বানাতে হবে।’ এটা শোনার পর তাঁর প্রতি আর বিন্দুমাত্র রেসপেক্ট থাকেনি। আরো অনেক বিষয় মিলিয়ে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমি যখন কাজ করতে চাচ্ছিলাম তখন দেখলাম আমার কোনো নির্দেশনা ফলো হচ্ছে না। পরে জানতে পেরেছি, আমার অধীন সব কর্মকর্তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা মানা যাবে না! এই অবস্থায় পদত্যাগ ছাড়া অন্য পথ দেখিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ দৈনিক কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন। আজ (শনিবার) পত্রিকাটির প্রথম পাতায় সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
পদত্যাগ করার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে ফোনে গান শুনিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। আসলে কী হয়েছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ৩১ মে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র জমা দিলাম। সংবিধানের ৫৭ ধারা অনুযায়ী একজন মন্ত্রী যখন পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবেন তখনই পদত্যাগ চূড়ান্ত হয়ে যায়। উনি পদত্যাগপত্র নিতে চাইছিলেন না। আমেরিকা গিয়ে সেখান থেকেই তাঁকে ফোনে বললাম, আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও কার্যকর করুন।’ তখন আমাকে নানা অফার করা হয়েছে, দলীয় পদ-পদবি দিতে চাইলেন। রাজি হইনি। এক পর্যায়ে ফোনেই উনি গান গাওয়া শুরু করলেন। আমি হতবাক হয়ে যাই। গানটা ছিল এমন—‘আমি কাউকে ছাড়ি না, আমি তোমাকে ছাড়ব না।’ এই গান তিনি দুই মিনিট ধরে রিপিট করলেন। বুঝে উঠতে পারছিলাম না দেশের প্রধানমন্ত্রী ফোনে গান গাইছেন আবার গানের সুর এ রকম—আমি তোমাকে ছাড়ব না, আমি কাউকে ছাড়ি না! কি ভয়ংকর অবস্থা! তখন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাহেবের একটা ডায়ালগ মনে পড়ল, ‘বাঘে ধরলেও ছাড়ে; শেখ হাসিনা যারে ধরে তারে ছাড়ে না!’ শেখ হাসিনার এই থ্রেট আমি কিভাবে গ্রহণ করব, তা বুঝতে পারছিলাম না। এটা ভয়াবহ একটা ব্যাপার ছিল। এরপর কার্যত দুই-তিন বছর আর আমি দেশে ফিরিনি!
পরবর্তী সময়ে আমি বাধ্য হলাম সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে। সব মিলিয়ে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমি সংসদ সদস্য ছিলাম। তখন আমি যেটা দেখেছি, দলকে পরিচালনা করেছে ডিজিএফআই। দলের নেতা, এমপি-মন্ত্রীদের রিপোর্ট করতে হতো ডিজিএফআইয়ের কাছে। এটা আমাকে হতাশ করেছিল। একটা গণতান্ত্রিক দল, যে দল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই দল পরিচালিত হচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা। এই দলের তো আর কিছুই রইল না তাহলে।