The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪

একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় বসে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেলেন মা

চার সন্তানের জননী মারুফা আক্তার দীর্ঘ ১৫ বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করে হাতে নেনে খাতা-কলম। প্রতিবেশীর ঠাট্টা-বিদ্রুপ তার ইচ্ছ শক্তিকে থামাতে পারেনি। সকল প্রতিবন্ধকতা উপক্ষো করে মেয়ের সঙ্গে প্রথমবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন মারুফা। তাতেই করলেন বাজিমাত। বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে তিনি ৪.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। তবে মেয়ের ফল খারাপ হওয়ায় আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

মারুফা আক্তার নীলফামারীর ডিমলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের পূন্যারঝাড় গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। লেখাপড়ায় ভালো হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভাবের কারণেই মারুফা আক্তারের বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। সে সময়ে দশম শ্রেণিতে পড়তো মারুফা। দীর্ঘ ১৫ বছরে অভাবী সংসারে চার জন নতুন অতিথি এলেও মারুফার লেখাপড়ার ইচ্ছা দমেনি। সংসারের দারিদ্র্যতার কারণে একইভাবে নিজের মেয়েকেও দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিতে বাধ্য হন সাইদুল দম্পতি।

এত কিছুর পরেও মারুফা চেষ্টা অব্যাহত রাখেন, কীভাবে নিজেকে এবং মেয়েকে লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনা যায়। এরইচেষ্টায় স্থানীয়ভাবে নিজেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। কিছুটা হলেও সংসারে আয় ফিরতে শুরু করে। নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সুপ্ত বাসনাকে পূরণ করতে স্বামীর উৎসাহে মেয়ে সঙ্গে পুনরায় ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে।

২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন মারুফা। এমনকি মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন তিনি। সারাদিনের প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর গভীর রাত ও ভোরে উঠে নামাজ কালাম শেষে লেখাপড়া শুরু করেন।

মারুফা আক্তার তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ডিমলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার ইচ্ছা সমাজের আর দশটা মানুষের মতো সেও নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে চায়। মারুফার আশা পুরণ হয়েছে, তবে মেয়ের ফল খারাপের কারণে কিছুটা হলেও মন খারাপ।

এদিকে মারুফার এ ফলাফলে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই খুশি। মারুফা জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

উল্লেখ্য, এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. পরীক্ষা ও ফালাফল
  3. একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় বসে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেলেন মা

একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় বসে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেলেন মা

চার সন্তানের জননী মারুফা আক্তার দীর্ঘ ১৫ বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করে হাতে নেনে খাতা-কলম। প্রতিবেশীর ঠাট্টা-বিদ্রুপ তার ইচ্ছ শক্তিকে থামাতে পারেনি। সকল প্রতিবন্ধকতা উপক্ষো করে মেয়ের সঙ্গে প্রথমবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন মারুফা। তাতেই করলেন বাজিমাত। বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে তিনি ৪.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। তবে মেয়ের ফল খারাপ হওয়ায় আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

মারুফা আক্তার নীলফামারীর ডিমলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের পূন্যারঝাড় গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। লেখাপড়ায় ভালো হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভাবের কারণেই মারুফা আক্তারের বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। সে সময়ে দশম শ্রেণিতে পড়তো মারুফা। দীর্ঘ ১৫ বছরে অভাবী সংসারে চার জন নতুন অতিথি এলেও মারুফার লেখাপড়ার ইচ্ছা দমেনি। সংসারের দারিদ্র্যতার কারণে একইভাবে নিজের মেয়েকেও দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিতে বাধ্য হন সাইদুল দম্পতি।

এত কিছুর পরেও মারুফা চেষ্টা অব্যাহত রাখেন, কীভাবে নিজেকে এবং মেয়েকে লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনা যায়। এরইচেষ্টায় স্থানীয়ভাবে নিজেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। কিছুটা হলেও সংসারে আয় ফিরতে শুরু করে। নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে সুপ্ত বাসনাকে পূরণ করতে স্বামীর উৎসাহে মেয়ে সঙ্গে পুনরায় ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে।

২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন মারুফা। এমনকি মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন তিনি। সারাদিনের প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর গভীর রাত ও ভোরে উঠে নামাজ কালাম শেষে লেখাপড়া শুরু করেন।

মারুফা আক্তার তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ডিমলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার ইচ্ছা সমাজের আর দশটা মানুষের মতো সেও নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে চায়। মারুফার আশা পুরণ হয়েছে, তবে মেয়ের ফল খারাপের কারণে কিছুটা হলেও মন খারাপ।

এদিকে মারুফার এ ফলাফলে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই খুশি। মারুফা জানান, উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

উল্লেখ্য, এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম।

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন