পারিবারিক সচ্ছলতা ও উন্নত জীবনের আশায় মাত্র এক মাস আগে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ করে মালয়েশিয়া যান মো. হৃদয় মণ্ডল। ২১ বছরের ছেলেকে প্রবাসে পাঠিয়ে পরিবারের সকলে দিন গুনছিলেন। হৃদয় টাকা পাঠানো শুরু করলে ঋণ শোধ হবে, পরিবারে সচ্ছলতা আসবে আরো কতো কি। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেলো পরিবারটির। একটি টাকাও পরিবারকে দিতে পারেননি হৃদয় মণ্ডল। ঋণের টাকাও পরিশোধ হয়নি তার। তার আগেই দুর্ঘটনায় নিভে গেলো হৃদয় মন্ডলের প্রাণ। ফলে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার!
গত ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করা অবস্থায় ওপর থেকে ভারী মেশিন শরীরের পড়ে গুরুতর আহত হন হৃদয়। সেখানে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় মৃত্যু হয় তার।
হৃদয় মণ্ডল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি গত ৩ জানুয়ারি মেগাটেক্স কোম্পানিতে বৈধকর্মী ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান হৃদয় মণ্ডল। সেখানে সেলাংগরের বানতিং এলাকায় একটি প্লাস্টিকের কারখানায় চাকরি পান তিনি।
নিহত হৃদয়ের বোন সালমা খাতুন বলেন, আমরা দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে, বড় ভাই বছর দশেক আগে হারিয়ে যান। হৃদয় আমাদের ছোট। পরিবারের একমাত্র ভরসা হৃদয়কে ঋণ করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক মাসের বেতন না পেতেই মারা গেলো হৃদয়।
নিহতের মামা আনোয়ার হোসেন বলেন, চার লাখ টাকা ঋণ করে মাত্র এক মাস ছয়দিন আগে তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। এখন পরিবারের অভাব দূর করা তো দূরে থাক, ঋণ শোধ করবে কীভাবে?
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের জেলা সমন্বয়কারী ফাহমিদা আহসান বলেন, মালয়েশিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত হৃদয়ের পরিবারের পাশে আমরা আছি। হৃদয় কোন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গেছে, ওয়েজ বোর্ডের সদস্য হয়ে গেছে কি না, সঠিক কোম্পানিতে কাজ করতো কি না, তাকে অবৈধভাবে কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল কি না, তার ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ করে আমরা পরিবারটিকে সহযোগিতা করবো, যেন তারা ক্ষতিপূরণ পায়।